পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭০
ধুস্তুরী মায়া

মিউনিসিপ্যালিটি রেলওয়ে বা জনসাধারণকে ঠকালে সাধুতার হানি হয় না। যদিই বা কিঞ্চিৎ অপরাধ হয় তবে ধর্মকর্ম আর লোকহিতার্থে কিছু দান করলে সহজেই তা খণ্ডন করা যেতে পারে। বণিকের একটি নাম সাধু, পাকা ব্যবসাদার মাত্রেই পাকা সাধু। মুচুকুন্দর দুর্ভাগ্য এই যে তিনি শেষরক্ষা করতে পারেন নি, দৈব তাঁর পিছনে লেগেছিল।

 দুর্দশাগ্রস্ত মুচুকুন্দবাবু আজকাল কি করছেন তা জানবার আগ্রহ কারও থাকতে পারে না। কিন্তু এককালে তাঁর খুঁটিনাটি সমস্ত খবরের জন্য লোকে উৎসুক হয়ে থাকত, তাঁর নাম-ডাকের সীমা ছিল না। প্রাতঃস্মরণীয় রাজর্ষি মুচুকুন্দ, ভারতজ্যোতি বঙ্গচন্দ্র কলিকাতাভূষণ মুচুকুন্দ— এইসব কথা ভক্তদের মুখে শোনা যেত। শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতরা বলতেন, ধন্য শ্রীমুচুকুন্দ, যাঁর কীর্তিতে কুল পবিত্র হয়েছে, জননী কৃতার্থা হয়েছেন, বসুন্ধরা পুণ্যবতী হয়েছেন। বিজ্ঞ লোকেরা বলতেন, বাহাদুর বটে মুচুকুন্দ, কংগ্রেস, হিন্দু মহাসভা, মুসলিম লীগ আর গভর্নমেণ্ট সর্বত্র ওঁর খাতির; ভদ্রলোক বাঙালীর মুখ উজ্জ্বল করেছেন, উনি একাই সমস্ত মারোয়াড়ী গুজরাটী পারসী আর পঞ্জাবীর কান কাটতে পারেন, লাট মন্ত্রী পুলিস—সবই ওঁর মুঠোর মধ্যে। বকাট ছেলেরা বলত, মুচুর মতন মানুষ হয় না মাইরি, চাইবামাত্র আমাদের সর্বজনীনের জন্যে পাঁচ শ টাকা ঝড়াক্‌সে ঝেড়ে দিলে। সেই আট-দশ বৎসর আগেকার প্রখ্যাতনামা উদ্‌যোগী পুরুষসিংহের কথা এখন বলছি।


মুচুকুন্দ রায়ের প্রকাণ্ড বাড়ি, প্রকাণ্ড মোটর, প্রকাণ্ড পত্নী। তিনি নিজে একট, বেঁটে আর পেট-মোটা, কিন্তু তার জন্য তাঁর আত্মসম্মানের হানি হয় নি; বন্ধুরা বলতেন, তাঁর চেহারার সঙ্গে