পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
লক্ষ্মীর বাহন
৭১

নেপোলিয়নের খুব মিল আছে। ইংরেজ জার্মন মার্কিন প্রভৃতির কিন্তু খ্যাতি শোনা যায় যে তারা সব কাজ নিয়ম অনুসারে করে; মুচুকুন্দ তাদের হারিয়ে দিয়েছেন। সদ্য অয়েল করা দামী ঘড়ির মতন সুনিয়ন্ত্রিত মসৃণ গতিতে তাঁর জীবনযাত্রা নির্বাহ হয়। অন্তরঙ্গ বন্ধুরা পরিহাস করে বলেন, তাঁর কাছে দাঁড়ালে চিকচিক শব্দ শোনা যায়। আরও আশ্চর্য এই যে, ইহকাল আর পরকাল দু দিকেই তাঁর সমান নজর আছে, তবে ধর্মকর্ম সম্বন্ধে তিনি নিজে মাথা ঘামান না, তাঁর পত্নীর আজ্ঞাই পালন করেন।

 প্রত্যহ ভোর পাঁচটার সময় মুচুকুন্দর ঘুম ভাঙে; সেই সময় একজন মাইনে করা বৈরাগী রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাঁকে পাঁচ মিনিট হরিনাম শোনায়। তার পর প্রাতঃকৃত্য সারা হলে একজন ডাক্তার তাঁর নাড়ীর গতি আর ব্লাডপ্রেশার দেখে বলে দেন আজ সমস্ত দিনে তিনি কতখানি ক্যালরি প্রোটিন ভাইটামিন প্রভৃতি উদরস্থ করবেন এবং কতটা পরিশ্রম করবেন। সাতটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত পুরুত ঠাকুর চণ্ডীপাঠ করেন, মুচুকুন্দ কাগজ পড়তে পড়তে চা খেতে খেতে তা শোনেন। তার পর নানা লোক এসে তাঁর নানা রকম ছোটখাটো বেনামী কারবারের রিপোর্ট দেয়। যেমন—রিক্‌শ, ট্যাক্সি, লরি, হোটেল, দেশী মদের এবং আফিম গাঁজা ভাং চরসের দোকান ইত্যাদি। বেলা নটার সময় একজন মেদিনীপুরী নাপিত তাঁকে কামিয়ে দেয়, তার পর দুজন বেনারসী হাজাম তাঁকে তেল মাখিয়ে আপাদমস্তক চটকে দেয়, যাকে বলে দলাই-মলাই বা মাসাঝ। দশটার সময় একজন ছোকরা ডাক্তার তাঁর প্রস্রাব পরীক্ষা করে ইনসুলিন ইঞ্জেকশন দেয়। তার পর মুচুকুন্দ চর্ব্য-চূষ্য-লেহ্য-পেয় ভোজন করে বিশ্রাম করেন এবং ঠিক পৌনে বারোটায় প্রকাণ্ড মোটরে চড়ে তাঁর অফিসে হাজির হন।