পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭২
ধুস্তুরী মায়া

 বড় বড় ব্যবসায় সংক্রান্ত কাজ মুচুকুন্দ তাঁর অফিসেই নির্বাহ করেন। অনেক লিমিটেড কম্পানির ম্যানেজিং এজেন্সি তাঁর হাতে, কাপড়-কল, চট-কল, চা-বাগান, কয়লার খনি, ব্যাঙ্ক, ইনশিওরেন্স ইত্যাদি; তা ছাড়া তিনি কনট্রাকটারিও করেন। কাজ শেষ হলে তিনি মোটরে চড়ে একটু বেড়ান এবং ঠিক ছটার সময় বাড়িতে ফেরেন। তার পর কিঞ্চিৎ জলযোগ করে তাঁর ড্রইংরুমে ইজিচেয়ারে শুয়ে পড়েন। তাঁর অনুগত বন্ধু আর হিতৈষীরাও একে একে উপস্থিত হন। এই সময় ভক্তিরত্ন মশাই আধ ঘণ্টা ভাগবত পাঠ করেন, মুচুকুন্দ গল্প করতে করতে তা শোনেন।

 মুচুকুন্দর ধনভাগ্য যশোভাগ্য পত্নীভাগ্য সবই ভাল, কিন্তু ছেলে দুটো তাঁকে নিরাশ করেছে। বড় ছেলে লখা (ভাল নাম লক্ষ্মীনাথ) কুসঙ্গে পড়ে অধঃপাতে গেছে, দু বেলা বাড়িতে এসে তার মায়ের কাছে খেয়ে যায়, তার পর দিন রাত কোথায় থাকে কেউ জানে না। মুচুকুন্দ বলেন, ব্যাটা পয়লা নম্বর গর্ভস্রাব। ছোট ছেলে সরা (ভাল নাম সরস্বতীনাথ) লেখাপড়া শিখেছে, কিন্তু কলেজ ছেড়েই ঝাঁকড়া চুল আর জুলফি রেখে আল্ট্রা-আধুনিক সুপার-দুর্বোধ্য কবিতা লিখছে। অনেক চেষ্টা করেও মুচুকুন্দ তাকে অফিসের কাজ শেখাতে পারেন নি, অবশেষে হতাশ হ’য়ে বলেছেন, যা ব্যাটা দু নম্বর গর্ভস্রাব, কবিতা চুষেই তোকে পেট ভরাতে হবে। মুচুকুন্দর শালা তারাপদই তাঁর প্রধান সহায়, একটু বোকা, কিন্তু বিশ্বস্ত কাজের লোক।

 মুচুকুন্দ-গৃহিণী মাতঙ্গী দেবী লম্বা-চওড়া বিরাট মহিলা (হিংসুটে মেয়েরা বলে একখানা একগাড়ি মহিলা), যেমন কর্মিষ্ঠা তেমনি ধর্মিষ্ঠা। আধুনিক ফ্যাশন আর চাল-চলন তিনি দুচক্ষে দেখতে পারেন না। ধর্মকর্ম ছাড়া তাঁর অন্য কোনও শখ নেই, কেবল