পাতা:ধুস্তুরী মায়া ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
লক্ষ্মীর বাহন
৭৫

একটু ক্ষীর আর ছানা খেলে, বাদাম পেস্তা আঙুর ছুঁলে না। মুচুকুন্দ বললেন, মাংসাশী প্রাণী, যদি পুষতে চাও তো আমিষ খাওয়াতে হবে। মাতঙ্গী বললেন, কাল থেকে মাগুর মাছ আর কচি পাঁঠার ব্যবস্থা করব।

 পেঁচা মহা সমাদরে বাড়িতেই রয়ে গেল। মুচুকুন্দ তাকে কাকাতুয়ার মতন দাঁড়ে বসাবেন স্থির করে পায়ে রূপোর শিকল বাঁধতে গেলেন, কিন্তু লক্ষ্মীর বাহন চিৎকার করে তাঁর হাতে ঠুকরে দিলে। তার পর থেকে সে যথেচ্ছাচারী মহামান্য কুটম্বের মতন বাস করতে লাগল। লক্ষ্মীপূজোর ঘরেই সে সাধারণত থাকে, তবে মাঝে মাঝে অন্য ঘরেও যায় এবং রাত্রে অনেকক্ষণ বাইরে ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু পালাবার চেষ্টা মোটেই করে না। বাড়ির চাকররা খুশী নয়, কারণ পেঁচা সব ঘর নোংরা করছে। মাতঙ্গী সবাইকে শাসিয়ে দিয়েছেন—খবরদার, পেঁচাবাবাকে যে গাল দেবে তাকে ঝাঁটা মেরে বিদেয় করব।

 পেঁচার আগমনের সঙ্গে সঙ্গে মুচুকুন্দবাবুর কারবারের উন্নতি দেখা গেল। বার-তের বৎসর আগে তিনি তাঁর দূর সম্পর্কের ভাই পঞ্চানন চৌধুরীর সঙ্গে কনট্রাকটারি আরম্ভ করেন। যুদ্ধ বাধলে এঁরা বিস্তর গরু, ভেড়া ছাগল শুওর এবং চাল ডাল ঘি তেল ইত্যাদি সরবরাহের অর্ডার পান, তাতে বহু লক্ষ টাকা লাভও করেন। তার পর দুজনের ঝগড়া হয়, এখন পঞ্চানন আলাদা হয়ে শেঠ কৃপারাম কচালুর সঙ্গে কাজ করছেন। গত বৎসর মুচুকুন্দ মিলিটারি ঠিকাদারিতে সুবিধা করতে পারেন নি, কৃপারাম আর পঞ্চাননই সমস্ত বড় বড় অর্ডার বাগিয়েছিলেন। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার, পেঁচা আসবার পরদিনই মুচুকুন্দ টেলিগ্রাম পেলেন যে তাঁর দশ হাজার মন ঘিএর টেণ্ডারটি মঞ্জুর হয়েছে।