নববিধান হইতে পারে না । দিগগজ পণ্ডিতকে তাহার যেন চড়াইতে ইচ্ছা! করিতে লাগিল। লোকটাকে অনেকদিন সে অনেক চা ও বিস্কুট খাওয়াইয়াছে,-সে। এমনি করিয়া তাহার শোধ দিল । শৈলেশ আসলে লোক মন্দ ছিল না, কিন্তু সে অত্যন্ত দুর্বলপ্ৰকৃতিব মানুষ। তাই সত্যকার লজ্জার চেয়ে চক্ষুলজ্জাই তাহার প্ৰবল ছিল। বিদ্যাভিমানের সঙ্গে আর একটা বড় অভিমান তাহার এই ছিল যে, সে জ্ঞানতঃ কাহারও প্ৰতি লেশমাত্র অন্যায় বা অবিচার কবিতে পাবে না। বন্ধুরা মুখে না বলিলেও মনে মনে যে তাহাকে এই ব্যাপারে অত্যন্ত অপরাধী করিয়া রাখিবে, ইহা বুঝিতে বাকী ছিল না-এই অখ্যাতি সহ্যু করা তাহার পক্ষে অসম্ভব । সারারাত্ৰি চিন্তা করিয়া ভোব নাগাদ তাহার মাথায় সহসা অত্যন্ত সহজ বুদ্ধির উদয় হইল। তাহাকে আনিতে পাঠাইলেই ত সকল সমস্যাব সমাধান হয় । প্ৰথমতঃ সে আসিবে না । যদি-বা আসে, মেচ্ছের সংসার হইতে সে দু’দিনেই আপনি পলাইবে । তখন কেহই আর তাহাকে দোষ দিতে পারিবে না । এই দু’-পাচদিন সোমেনকে তাহার পিসীর বাড়ীতে পাঠাইয়া দিয়া নিজে অন্যত্র কোথাও গা-ঢাকা দিয়া থাকিলেই হইল। এত সোজা কথা কেন যে তাহার এতক্ষণ মনে হয় নাই, ইহা ভাবিয়া সে আশ্চৰ্য্য হইয়া গেল । এই ত ঠিক । কলেজ হইতে সে সাতদিনের ছুটি লইল । এলাহাবাদে একজন বাল্যবন্ধু ছিলেন, নিজের যাওয়ার কথা তাহাকে তার করিয়া দিল, এবং বিভাকে চিঠি লিখিয়া দিল যে, সে নন্দীপুর হইতে উষাকে আনিতে পাঠাইতেছে, যদি আসে ত সে যেন আসিয়া সোমেনকে শু্যামবাজারে লইয়া যায়। এলাহাবাদ হইতে ফিরিতে তাহার দিন সাতেক বিলম্ব হইবে ।
পাতা:নববিধান - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।