পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নরওয়ে ভ্রমণ

জাহাজখানা চিনিয়া লওয়া একটু মুস্কিল হইবে ভাবিলাম। কিন্তু যাত্রীর দল সম্মুখীন হইবামাত্র সেই বৃহদাকার ভাসমান গৃহ অভ্যাগত সকলক সসম্ভ্রমে আহ্বান করিতে লাগিল। তৎপর একেবারে আপনার বক্ষের মধ্যে সকলকে স্থান দান করিয়া আত্মীয়তার পরাকাষ্ঠা দেখাইল। সভ্য দেশের ভাষাতত্ত্ববিদগণ কেন যে ইহাদিগকে কোমলাঙ্গীগর দল ভুক্ত করিয়া গিয়াছেন সহসা তাহার কোন সুযুক্তি খুঁজিয়া পাইলাম না, এবং অদ্যবধি ইহা আমার পক্ষে এক দুর্ভেদ্য রহস্য হইয়াই রহিয়া গিয়াছে। অথবা কেবল শারীরিক সামর্থ্য সকল সময় আভ্যন্তরিক বলের পরিচায়ক নহে। ললিত অঙ্গেও অনেক সময় ও প্রচণ্ড প্রভুশক্তির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।

 জাহাজের কর্ম্মচারীদের কার্য্যের সুশৃঙ্খলতা এবং সুবন্দোবস্ত দেখিলে বিস্মিত হইতে হয়। কোথাও “রা” শব্দটি নই; যেন কোন অচিন্ত্য শক্তির সাহায্যে সুকৌশলে সকল কার্য্য সুসম্পন্ন হইয়া যাইতেছে। আমরা জাহাজে উঠিয়াই আপন আপন ক্ষুদ্র কুটরীর তল্লাসে মনোনিবেশ করিলাম। ছয়শত ষাটটি কবিনের মধ্য হইতে নিজেদের নম্বরের কেবিন বাহির করিয়া লওয়া একটু যেন শ্রমসাধ্য হইয়া পড়িল। নানা পথে বহুবার যাতায়াত করিবার পর আমাদিগের বাসকুটীরের উদ্দেশ পাওয়া গেল এবং তাহার অভ্যন্তরে প্রবেশ মাত্র চিরপরিচিত জিনিষপত্রের সন্ধান পাইয়া নিশ্চিত হইলাম। তখন আমি আর আমার ভ্রাতুষ্পুত্রী বিছানার উপর বসিয়া একটু আরাম উপভোগ করিতে লাগিলাম।

 জাহাজ ছাড়িতে বেলা প্রায় বারটা বাজিল। এবং সেই সঙ্গে মধ্যাহ্ন ভাজনের ঘণ্টা পড়িল। আমরা তাড়াতাড়ি উঠিয়া হাতমুখ ধুইয়া ভোজনাগারের উদ্দেশ্যে রওনা হইলাম। কিন্তু আমরা দুইটি ক্ষুদ্র প্রাণী এই প্রকাণ্ড জলযানের উদর রূপ ব্যুহ ভেদ করিয়া গন্তব্য স্থানে পৌঁছিতে পারিব এমন আশা করিতে পারিলাম না, কাজেই সহযাত্রীদিগের অনুসন্ধানে ব্যস্ত হইলাম। তখন কিন্তু সহসা কাহারও সাক্ষাৎ পাওয়া গেল না, শেষে মনে পড়িয়া গেল যে, আহ্বান মাত্রই আহারের জন্য অগ্রসর হওয়া ইংরেজি সভ্যতার বিরুদ্ধ। অগত্যা কি আর করি, ত্বরিত গতিতে কিছু সংযত হইয়া চলিতে লাগিলাম। তখন অনেক রামা বামার দর্শন পাইয়া তাহাদিগের অনুসরণ করিয়া অবশেষে গন্তব্য স্থানে গিয়া পৌঁছিলাম। দ্বার দেশেই বিপুল দেহধারী এক শ্বেতাঙ্গ কর্ম্মচারী দণ্ডায়মান ছিলেন। তিনি শিষ্টাচারের বশবর্ত্তী হইয়া সস্মিতমুখে আমাদিগের পথপ্রদর্শক হইলেন এব আমাদিগকে নির্দ্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাইয়া দিয়া