পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নরওয়ে ভ্রমণ
২৫

যখন অমৃতের সন্তান, তখন অমৃতে আমাদের অধিকার আছেই, কিন্তু হায়! পানের রীতি জানি না—শিখি নই যে!

“ন যত্র দুঃখং ন সুখং চিন্তা, ন দ্বেষরাগৌ ন চ কাচিদ্ ইচ্ছা।”

এমন পান-পাত্র সঙ্গে অনিয়ছি কি? সুতরাং, “ঢেঁকির স্বর্গে গিয়াও ধান ভানা-” ভিন্ন, আর কি হইবে!

 এইরূপে বাহিরে যখন নীরব নিস্তব্ধ ভোজের ব্যাপার চলিতেছিল, তখন ঘরের ভিতরে আসিয়া তাহার বিপরীত দেখিলাম। এখানে স্বয়ং অপ্সরাগণ সহস্তে সুধা বণ্টন করিতেছেন। ইহারা সপ্তসহোদরা, সুরুয়া হইতে শুরু করিয়া তালিকা মত, নিপুণতা সহকারে পরিবেষণ করিয়া যাইতেছে। ইহাদের পরিধেয়-বস্ত্র অতীব শোভন ও পরিচ্ছন্ন এবং চেহারাও বেশ প্রসন্ন। শুনিলাম, বেশভূষা-বিষয়ে নরওয়েবাসীরা সকলেই য়ুরোপীয়দিগের অণুকরণ করিয়া থাকে, কেবল পরিচারিকার দল নাকি অদ্যাবধি তাদের স্বদেশের পরিচ্ছদের মর্য্যাদা রক্ষা করিয়া চলিতেছে। তাদের পরণে একটি সাদা ঘাগরা, আর গায়ে সাদা জামার উপর জরীর কাজ করা, লাল মকমলের এক জোয়াক। স্কন্ধের দুইপাশে দুইটি বেণী লম্বমান, আর মস্তকোপরি একটি লেসের টুপি বর্ত্তমান। স্বাস্থ্যের প্রতিমূর্ত্তি বলিয়া ইহাদের গণ্ডস্থল আরক্তিম, আর রংটি যেন দুধে আল তায় মিশান। নেত্র যুগল নীল-পাটল, আর কেশকলাপ কনকোজ্জ্বল, তাহাতে এই সুরুচি সম্পন্ন বেশ বিরচনা, আমাদের চোখে কেমন একটু চমক লাগাইয়া দিল। আমরা যেমন এদের দিকে একদৃষ্টে চাহিয়া আছি, এদের চক্ষুও তেমনই আমাদেরই মুখের উপর পড়িয়া আছে। তাহারা পরিবেষণের স্থলে ঘুরিয়া ফিরিয়া কেবলই অমাদিগের দিকেই আসিতে লাগিল। তখন বুঝিলাম যে, আমরা এ দেশে আসিয়া, যেমন এক দিকে দর্শক, তেমনই আর একদিকে দর্শনীয় পদার্থরূপেও পরিণত হইয়াছি।

 এবার প্রস্থানের আয়োজন। কে বলিতে পারে, হয় ত জন্মের মত এই “Lake Dyupvand in Merock” এর লীলাখেলা সাঙ্গ করিয়া বিদায় লইলাম। বিদায়-কালে শুনিলাম, এই সপ্তভগিনীর জননীই নাকি, এই পান্থশালার স্বত্ত্বাধিকারিণী। প্রতি বৎসর তিনি এপ্রেল মাসে কন্যাগণ সহ এখানে আগমন করিয়া সেপ্টেম্বর মাস পর্য্যন্ত আপন কার্য্য সাধন করিয়া স্বদেশে চলিয়া যান। তখন আর এখানে থাকা চলে না, বরফে সব ঢাকিয়া যায়।