পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নরওয়ে ভ্রমণ
৩৩

সংকল্প করিলাম। ফিয়ড্ বেচারার ঘাড়ে আজ বোঝা ভারি। একে আমরা এতগুলি নরনারী তার বক্ষের উপরে ত আছিই, তাতে এত সব সখীসমেত শৈলকুমারীও সঙ্গে। দেখিলাম, দূর হইতে চিরবাঞ্ছিত বল্লভের দর্শনমাত্র সেই প্রেমবিহ্বলার নবীন প্রাণ সমগ্র মাধুর্য্য-রসের আতিশয্যে যেন সংজ্ঞাহারা, আর সুহৃদর ফিয়ড্ অমনই হস্তপ্রসারণপূর্ব্বক, উভয়পার্শ্ববর্তী কৌতূহলী মহীধর দর্শকমণ্ডলীকে যেন বলপূর্ব্বক সরাইয়া দিয়া, আপনি তাহাকে সসম্মানে আপন বক্ষস্থলে রক্ষা করিয়া বহিয়া লইয়া চলিয়াছেন। আর আর সীমন্তিনীরা মন্থর-গমনে তাহার পথ অনুসরণ করিতেছে। তারপর ইহাকে প্রিয়সখার অঙ্কশায়িনী করিয়া দিয়া আপনি অদৃশ্য হইলেন। সেই অঙ্গ স্পর্শে সিন্ধুরাজ কি বলিতেছেন—

“তব স্পর্শে স্পর্শে মম পরিমূঢ়েন্দ্রিয়গণঃ।”

 আর শৈলসুতার “মনঃ সান্দ্রানন্দং স্পৃশতি ঝটিতি ব্রহ্ম পরমম্” একেবারে চিন্ময়ে লয়। ভাবিলাম, এ দেখা ই শুধু দেখা নয়, কত শেখা। আজ দেশ ভ্রমণের সখ সার্থক মনে হইল! এজন্য এই অর্থ-ব্যয়, আর অনর্থক ভাবিতে পারিলাম না। এমন ভাবে সেই মহান্ অস্তিত্বে আপনাকে একেবারে বিলুপ্ত করিয়া দিতে, কেবল প্রেমিক ভক্ত বৈষ্ণব কবিগণই পারিয়াছিলেন। তাই রসজ্ঞ কবিচূড়ামণি—

"চণ্ডীদাস কহে, সে ত এক হয়ে
হয় বা না হয় ভিনু।
বিরলে বসিয়া দুহুঁ মিশাইয়া
গড়ল একই তনু।”

নয়ত এমন কথা আর কে বলিতে পারে?

 পরদিন (Romsdal) রম্‌সডাল নামক স্থান পরিদর্শন। প্রাতেই হাস্যবদনে আর এক ফিয়ড্ ভাইয়া আসিয়া হাজির। আমাদিগকে তাঁর জন্মভূমির চারিদিকের যা-কিছু শোভা-সম্পদ, দেখাইবেন বলিয়া, নিমন্ত্রণ করিলেন এবং আমাদের বিপুল যানকে অঙ্গুলিনির্দ্দেশপূর্ব্বক তাঁর অনুসরণ করিতে আদেশ দিলেন। পথে ছোট বড় কতকগুলি দ্বীপ গ্রাম্যবধূদের মত জলে গা ঢাকা দিয়া, মাথা তুলিয়া—লীলাভরে এই অজ্ঞাতকুলশীল জলযানকে নিরীক্ষণ করিতেছিল;—দেখিয়া সে, চতুরালী করিয়া, উহাদের মাথায় জল ছিটাইয়া দিয়া একটু রসিকতা করিল। এস্থলে বলা বাহুল্য যে, আমাদের মতে ইনি “শি” নন,—“হি,” সুতরাং এ মতিভ্রমে ইঙ্গ-বঙ্গদল হাসিবেন না!