পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নরওয়ে ভ্রমণ
৩৫

তাই এর প্রতি আরও মায়া হইল। ঘর-বাড়ী ভারি ফিট্‌ফাট্ দেখিলাম। সে একাই সব তত্ত্বাবধান করে। আমাদিগকে ‘ইণ্ডিয়া’র বিষয় কত কি প্রশ্ন করিল এবং আমাদের উত্তর শুনিয়া—সে দেশ দেখিবার জন্য ঔৎসুক্য জানাইল; কিন্তু সে আশা যে কোন দিনও পূর্ণ হইবার নয়, তাও সে জানে—বলিল। তারপর, আমরা জিজ্ঞাসা করিলাম, “আচ্ছা, বল দেখি তোমাদের যদি দৈবাৎ ঘড়ী বন্ধ হইয়া যায়, তবে তোমাদের বেলার ঠিক পাও কি করিয়া?” মৃদু হাস্য করিয়া সে উত্তর করিল, “তা কি জানেন, আমরা কাজ-সারা দিয়া সময়ের ঠিকানা করি। ঘড়ীর কাঁটার মত আমাদের কাজ চলে; কাজেই ঘড়ী দেখিবার দরকার হয় না। এই আলো ক’মাস আমরা দুই তিন ঘণ্টার বেশী ঘুমাই না। তারপর যখন অন্ধকারের দিন আসে, তখন আমাদের বাকি ঘুমটা পোষাইয়া নেই। তখন যদি আমাদের দুরবস্থা দেখেন, ত’ আপনাদের দুঃখ হবে। সকল সময়েই কৃত্রিম আলোর সাহায্যে ঘরের বাইরে যাইতে হয়। তখন লোকজনের সঙ্গে গিয়া দেখা সাক্ষাৎ করা ভারি দুর্ঘট হইয়া পড়ে। তাই যে যার বাড়ী বসিয়া, নিপুণ কাজে দিন কাটায়। গাড়ীঘোড়া তখন রাস্তায় চলিতে পারে না। পায়ে চলাও দায়, কেন না দুই চার ফুট বরফ রাস্তায় সর্ব্বদা থাকে, কখনও আবার তার চেয়েও বেশী। তাই Sledge নামক একরকম কাঠের গাড়ী, হরিণে টানিয়া যায়-তাতে ক’রেই নেহাৎ যাদের ঘরের বাহির না হইলে নয়, তাদের কাজ চালাইতে হয়। গৃহপালিত জীবজন্তু কেহই চরিয়া খাইতে পায় না, সব ঘরের ভিতরে বাঁধা; আর এদের ছমাসের খাদ্যের যোগাড় আগে হইতেই রাখিতে হয়। আমাদের খাওয়ার জিনিষ তখন কিছুই মিলে না। শিকারের পশুপক্ষীর মাংস নুন দিয়া শুকাইয়া রাখি। যথেষ্ট যব, রুটীর জন্য মজুত রাখা চাই; আর আলু ত অপর্য্যাপ্ত রাখিতেই হয়। তাজা কোন দ্রব্য খাওয়া, তখন আর আমাদের ভাগ্যে ঘটে না। এই যে এত সব শস্য দেখিতেছেন, এর চিহ্নও থাকিবে না; এই সবুজ রঙই আর দেখা যাবে না। জুন হইতে সেপ্টেম্বর অবধি, আমাদের যত কিছু সুখসুবিধা, সব তখন যাবে। তবে বিধির এমনি মঙ্গলবিধান যে, এই তিন মাসের ভিতরই শস্য বোনা, পাকা, কাটা সব শেষ করা যায়।”—বলিয়াই আমাদের লইয়া সে ঘর হইতে হল ঘরে যাইবার জন্য উঠিয়া দাঁড়াইল এবং আমরাও ধীরপদে তাহার পশ্চাৎগামী হইলাম। সে ঘরে অনেক দ্রব্যজাত বেশ বিশিষ্ট মত সাজান ছিল। তার ভিতর হইতে একখানা পুরাণ পাদুকা লইয়া হাসিতে হাসিতে আমাদের কাছে আসিয়া বলিল-“জানেন;—এইটি আমার বৃদ্ধপ্রপিতামহীর পায়ের