পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নরওয়ে ভ্রমণ
৫৭

আমাদিগের নূতন পরিচিত বন্ধু সেই হোটেলের উদ্দেশ্যে চড়াই-পথ ধরিলেন। আমরাও তাঁর অনুগামী হইলাম।

 দেখিলাম কি প্রশস্ত পাহাড়টি! কি দিব্য পরিপাটী হোটেলটি! কি চমৎকার চতুর্দ্দিকের দৃশ্যটি! একটু বিশ্রামের বাসনায় ব্যাকুল হইয়া আমরা হোটেলের বারাণ্ডায় গিয়া বসিলাম। তখন আমাদের প্রতিকৃতি তুলিবার মানসে নিকটস্থিত এক ব্যবসাদার ফটোগ্রাফার আসিয়া সম্মুখে হাজির। তার নিবেদন এই যে, এক ঘণ্টার আগেই ফটো তুলিয়া এবং ছাপাইয়া আমাদিগকে দিয়া যাইবে, ইহার অন্যথা হইবে না। আমরা প্রথমে একথা বিশ্বাস করিতে চাই নাই। কিন্তু যখন ভাবিয়া দেখিলাম যে, না দিতে পারিলে ইহাতে লোকসান্ সে ব্যক্তিরই, তখন স্বীকৃত হইলাম। কিন্তু চেষ্টা করিয়া চেহারায় ইচ্ছামত চারুতা ফলাইতে গেলেই যত সব গোল বাঁধায়। হুকুমের হাসি যেন তখন দন্তপীড়াজনিত দুঃখকেই প্রকটিত করে। দেহকে নিশ্চল রাখিতে গিয়া, নয়নযুগল চঞ্চল হইয়া পড়ে। তখন তাকে শাসনে আনিতে গেলে মস্তক বিদ্রোহ করে। সুতরাং প্রতিকৃতি তোলাইবার বিড়ম্বনা বহু। তা কে শোনে! নাছোড়বান্দা! অগত্যা কাজ হাসিল হইলে পর সে লোকটির হাত হইতে অব্যাহতি পাইয়া, বন্ধুবর আমাদিগকে লইয়া ঘরের ভিতর যাইতেছেন, এমন সময় তাঁহার দুহিতা, জামাতা ও বনিতা আসিয়া আমাদিগকে দর্শন দিলেন। তখন কর্ত্তা মহাশয়, ছোট গলায় একটু গর্ব্বভরে আমাদিগকে বলিয়া রাখিলেন যে, তাঁহার এই কন্যা, এদেশে একজন অসামান্য রূপসীর মধ্যে পরিগণ্যা। একথা শুনিয়া আর বিশেষভাবে সে মুখচন্দ্র নিরীক্ষণ না করিয়া কি উদ্ধার আছে? কিন্তু মূলেই যে ভুল! যে ভ্রমর-কৃষ্ণ-গোল-লোচন আমাদের ধারণায় সৌন্দর্য্যের সার ভূষণ, তার পরিবর্ত্তে পিঙ্গলনয়ন হইলেই—হউক্ না সে অঙ্গনা “পক্ক বিম্বাধরোষ্ঠী” “মধ্যে ক্ষামা, চকিতহরিণীপ্রেক্ষণা” “শিখরিদশনা,” আমরা সেখানে রূপের সে মাহাত্ম্যই খুঁজিয়া পাই না। কিন্তু কি করি, এস্থলে স্বয়ং জনকই যখন বড়াইকর্ত্তা, তখন ভদ্রতার অনুরোধে তাঁর কথাই স্বীকার করিতে হইবে। আর পাশ্চাত্য সভ্যতা অনুসারে এসব বিষয়ে অনৃতভাষণ, মোটেই নাকি দোষাবহ নহে বরং যথার্থ মনোগত ভাব ব্যক্ত করাই ভারি অসঙ্গত। তারপর কর্ত্তৃঠাকুরাণীর বিশাল বপু দেখিয়া আমরা একটু থম্‌কিয়া গেলাম। দেশাচারের অনুরোধে “মধ্যে ক্ষামা” হইতে গিয়া তিনি যেন ভারি অস্বস্তি মনে করিতেছিলেন। দেখিলাম, তাঁর নিটোল কপোল যুগল, প্রসার লাভ করিতে গিয়া নেত্রদ্বয়কে