পাতা:নরওয়ে ভ্রমণ.pdf/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৬
নরওয়ে ভ্রমণ।

আসিয়া চক্ষের সম্মুখে দাঁড়াইয়া, তুলনার কথা কাণে তুলিয়া সব ভণ্ড‌ুল করিয়া দিল। আর কিসের কলা! কিসের কৌশল! কার কাছে কি? তোমরা হয়ত বলিবে, সে হ’লো সৌখীন বাদসাহের প্রেয়সী বেগমের সাধের অন্তিমশয্য!! আর এ হ’লো শিক্ষিত সম্রাটের নিজ বাসোপযোগী প্রাসাদ! তা হবে।

 অতঃপর আমাদের সেই প্রজ্ঞাবান্ প্রত্নতত্ত্ববিদের প্রচার-কার্য্য পূর্ণমাত্রায় চলিতে লাগিল, আমরাও অবসরমত তাহা অবধান করিতে অন্যথা করিলাম না। কিন্তু ওসব দেখিয়া শুনিয়া আর বাহবা দিতে পারা গেল কৈ? বড় জোর “বেশ” বলা পর্যন্তই শেষ। পদযুগল ক্রমশঃই ক্লান্ত হইতে লাগিল, শেষাশেষি যেন তারা যন্ত্রবৎ পরিচালিত হইতেছিল। ফল কথা, এমন সব জায়গা এক বেলায় কাজ-সারা-গোছ দেখায় হয় না। তবে সন্ধ্যার প্রাক্কালে, রক্ষককে যখন মাঠ ঘাট ছাড়াইয়া, পশুপালকে বাড়ীপানে ধাওয়াইতে হয়, তখন এই রকমই হুটোপুটি করিতে হয় বটে।

 আরও এক কথা, একটি দুইটি নয়! চৌষট্টিটি ঘর! দরবার হলে গিয়া দেখি, তাহাতে বিচারকের আসন হইতে, বিলাসোচিত নৃত্যগীতাদির ব্যবস্থাও রহিয়াছে। বুঝি বা তাবৎ দিনের বৈষয়িক কর্ম্মের কঠোরতার মধ্যে, রজনীযোগে উৎসবানন্দ উপভোগের উপাদান লক্ষ্য করিতে লাগে ভাল। ধর্ম্মালয়ের ধর্মাবতারের মর্মর মূর্ত্তি দেখিয়া প্রীত হইয়াছিলাম। মানবের দুঃখে দুঃখী যীশুর ম্লানমুখে, আনত চক্ষে, বক্ষে, শিল্পী যে কারুণ্য ফুটাইয়া দিয়াছেন, তাহা বড়ই হৃদয়গ্রাহী। একটি গবাক্ষ হইতে ইহা দেখিতে দেখিতে ভাবিতেছিলাম আজ তাঁর মৃত্যুতে তিনি সফল মনোরথ হইয়াছেন কি? জীবের দৈন্য ঘুচিয়াছে কি?

 এ গির্জার দেওয়ালের গায়ের স্বচ্ছ কাচের তিতরে, যে চমৎকার চিত্র সমুদায় অঙ্কিত রহিয়াছে, অধুনাতন তদ্দেশীয় শিল্পীদিগের নাকি সে নৈপুণ্য সম্পূর্ণ অবিদিত। এজন্য আমাদের এই গুণজ্ঞ গুরুমহাশয় মাঝে মাঝে বড়ই মর্মপীড়া অনুভব করেন, বলিলেন।

 এই হর্ম্ম্যমাল্য পরিদর্শনান্তর Hamletএর সমাধিস্থানের উদ্দেশে ধাবিত হইতে হইবে, এরূপ আভাস পাওয়া গেল। দেখা যাবে, অমন প্রখ্যাত পুরুষের শেষ পরিণতির অবস্থাটা কি? নির্দ্দিষ্ট স্থানে পৌঁছিতে জলযোগের সময় হইল, এবং তৎক্ষণাৎ একটি একতালা হোটেলের আশ্রয় লওয়া গেল। এটি হোটেলের মত হোটল বটে। ইহার ভিতরকার বৃহৎ ব্যাপার দেখিয়া তাজ্জব হইলাম। জিজ্ঞাসায় জানা