পাতা:নাগপাশ - হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ.pdf/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নাগপাশ ।

এমন কি, সতীশকে ও প্রভাতকে সমুদ্রে স্নান করিতে দেখিয়া এক দিন সমুদ্রে স্নান করিবার ইচ্ছাও প্রকাশ করিল। শুনিয়া পিসীমা বলিলেন, “ঠাকুর করুন, তুই শীঘ্র সারিয়া ওঠ,—সমুদ্রে স্নান করিবার মত সবল হ’।” শিবচন্দ্র বলিলেন, “তুমি সারিয়া উঠ। আমরা মাতাপুত্ত্রে এক দিন স্নান করিব। আমি এখনও সাহস করিয়া সাগরে স্নান করি নাই।”

 সে দেশের লোকের কথা কমল কিছুই বুঝিতে পারিত না। ভাঙ্গা হিন্দীর সাহায্যে — ভৃত্যের সহায়তায় শিবচন্দ্র কোনও রূপে সে কথা বুঝিতে পারিতেন। ভিখারিণী ভিক্ষা করিতে আসিলে, কড়ি-বিক্রেতা কড়ি বিক্রয় করিতে আসিলে, ধীবর সামুদ্রিক মৎস্য লইয়া আসিলে, শিবচন্দ্রকে তাহাদের কথা কমলকে বুঝাইয়া দিতে হইত। শিবচন্দ্র যে সকল সময় অভ্রান্ত হইতেন, এমন বোধ হয় না। কিন্তু এই দ্বিভাষীর কার্য্যে শিবচন্দ্র ও কমল — উভয়েরই অসীম আনন্দ। এক এক দিন কমল জ্যেষ্ঠতাতের সহিত সমুদ্রতীরে অল্প দূর বেড়াইয়া আসিত। কিন্তু অতি সামান্য দূর যাইলেই সে শ্রান্ত হইয়া পড়িত। শিবচন্দ্র তাহাকে ফিরাইয়া আনিতেন।

 সকলেরই আশা হইল, যত্নে কমলের জীবন-দীপ সহসা নির্ব্বাপিত হইবে না; এমন কি, সে সারিলেও সারিতে পারে। দারুণ আশঙ্কায় সতীশের হৃদয় বাত্যাবিক্ষুব্ধ সমুদ্রের মত অশান্ত হইয়া উঠিয়াছিল — এখন সে হৃদয় বাত্যাবসানে সাগরের মত অপেক্ষাকৃত শান্ত হইল। নিরাশার মেঘঘোরে ক্ষীণ রেখায় আশার অরুণকিরণ—

১৮৪