পাছে আর কেহ তাহার এই দারুণ দুঃখের কথা জানিতে পায়! সে স্নেহপ্রসূত বেদনা যে একান্ত তাহারই। আবার ভাহা জানিলে সকলে ব্যস্ত ব্যথিত হইবেন। কিন্তু সে প্রায়ই একক থাকিতে পাইত না, তাই মনের দুঃখ মনেই চাপিয়া রাখিত; আপনি বিষম বেদনা পাইত।
একদিন অমল নিকটে আসিলে কমল যখন তাহাকে খেলা করিতে যাইতে বলিল, তখন অমল মা’র গলা জড়াইয়া ধরিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “মা, তুমি আমাকে কাছে আসিতে দাও না কেন?” কমল আর পারিল না; পুত্ত্রকে বক্ষে চাপিয়া ধরিল, তাহার পর উচ্ছ্বসিত বেদনায় কাঁদিতে লাগিল। কোমল কুসুম নিশার শিশিরসিক্ত হইয়া উঠিল। কিন্তু অমল কিছু বুঝিতে পারিল না। তথাপি ব্রততীর হৃদয়ের সহিত কোরকের হৃদয় এক সূত্রে বদ্ধ, ব্রততীর হৃদয়ে আঘাত লাগিলে কোরকের হৃদয়েও বেদনা বাজে। তাই জননীর ক্রন্দনে অমলও কাঁদিতে লাগিল। এই সময়-সতীশ কক্ষে প্রবেশ করিল; দেখিল, মাতাপুত্ত্র ক্রন্দনরত, —কাঁদিয়া উভয়েরই চক্ষু ফুলিয়া উঠিয়াছে। সতীশ জিজ্ঞাসা করিল, “কি হইয়াছে?” সে প্রশ্নে কমলের অশ্রু দ্বিগুণ রহিল। সতীশ পার্শ্বে বসিয়া তাহার অশ্রু মুছাইতে লাগিল; কিন্তু সে যত মুছায়, অশ্রু তত বহে; উচ্ছ্বসিত যাতনার মুক্ত উৎসমুখে সে অশ্রু বহিতেছিল। শেষে সতীশ পুত্ত্রকে ভুলাইয়া লইয়া গেল, এবং তাহাকেই জিজ্ঞাসা করিয়া কমলের ক্রন্দনের কারণ বুঝিল। সে পুত্ত্রকে রাখিয়া আসিয়া কমলের কাছে বসিল; নানা কথায় তাহাকে অন্যমনস্ক;
১৯৮