পাতা:নাগপাশ - হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ.pdf/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চতুর্থ পরিচ্ছেদ।

ব্যথিত হৃদয়।

হৃদয়ে আশা নাই,—জীবনে সুখ নাই,—জগতে আনন্দ নাই। কমল যাঁহাদের হৃদয়ের আশা, জীবনের সুখ, জগতের আনন্দ ছিল, তাঁহারা তাহার শবদেহ লইয়া সমুদ্রতীরে উপনীত হইলেন। সকল বাঙ্গালী কর্ম্মোপলক্ষে বা অন্য কারণে ওয়ালটেয়ারে ছিলেন, তাঁহারাও কেহ কেহ আসিলেন। বিদেশে বাঙ্গালী বাঙ্গালীকে যত সাহায্য করে—যত সহানুভূতি করে—স্বদেশে তত করে না। যে স্থানে অন্য সম্বন্ধ ও তাহার আনুসঙ্গিক স্বার্থবিদ্বেষাদি থাকে না, সে স্থানে মানুষে মানুষে সহজ ও স্বাভাবিক সম্বন্ধ আত্মপ্রকাশ করে।

 শব সমুদ্রতীরে সংস্থাপিত হইল। চিতা রচিত হইতে লাগিল। নবোদিত রবির কিরণ সেই মরণাহতার প্রশান্ত কোমল মুখে পতিত হইল। শিবচন্দ্র শবের পার্শ্বে বসিয়া অধীরভাবে রোদন করিতে লাগিলেন, “মা, আমার বড় আশা ছিল, তোদের সুখী দেখিয়া সুখে মরিব। মা, তুই আমার সামান্য কষ্ট সহিতে পারিতিস্ না। আজ সব ভুলিয়াছিস্?”

 নবীনচন্দ্র ও সতীশ উভয়ে নীরব। উভয়েই রুদ্ধমুখ আগ্নেয় গিরির মত অন্তরস্থিত বহ্নিজ্বালায় দগ্ধ—দারুণ শোক হৃদয় দগ্ধ করিয়া ফেলিতেছে।

 শবদেহ সমুদ্রকূলে স্থাপিত হইয়াছিল। ঊর্ম্মিমালা অদূরে বেলায় লুটাইয়া ফিরিয়া যাইতেছিল। শিবচন্দ্র শবের পার্শ্বে।

২০৪