পাতা:নাগপাশ - হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ.pdf/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নাগপাশ ।

তখন নলিনবিহারীর সংজ্ঞাসঞ্চার হইয়াছে; সে যেন দীর্ঘনিদ্রাবসানে নয়ন মেলিতেছে। ডাক্তার পরীক্ষা করিলেন, দেহের দৌর্ব্বল্য দেখিয়া প্রশ্ন করিলেন, “অসুস্থ কয় দিন হইয়াছে?”

 কৃষ্ণনাথ উত্তর করিলেন, “আজ আফিসে কায করিতে করিতে অজ্ঞান হইয়া পড়িয়াছে।”

 “কেবল আজ?”

 “হাঁ।”

 চিকিৎসক নিতান্ত বিস্মিত হইলেন। এ বিষম দৌর্ব্বলা সত্বেও যে রোগী আফিসে কায করিতে পারে, চিকিৎসক সহজে তাহা বিশ্বাস করিতে পারিতেছিলেন না। যাহা হউক, যথারীতি কিছু ঔষধের ব্যবস্থা করিয়া তিনি বিদায় লইলেন; বলিয়া যাইলেন,— রোগীর সম্পূর্ণ বিশ্রাম আবশ্যক।

 সে দিন আর প্রভাতের যাওয়া ঘটিল না।

 পর দিন চিন্তা আসিল। তখন শোকের প্রথম উচ্ছ্বাস অপগত। তাহার একমাত্র ভগিনীর মৃত্যুসংবাদ সে পায় নাই; সংবাদ পাইবারও যথোচিত চেষ্টা করে নাই। যখন গৃহে সকলে শোকে অভিভূত, —তখন সে দূরে। সে কেমন করিয়া গৃহে মুখ দেখাইবে? তাহার পর সংবাদ পাইয়াও ঘটনাচক্রে তাহার গমনে বিলম্ব ঘটিল। পিতা যে যাইবার সময় তাহাকে সংবাদও দেন নাই, সে কি কেবল তাহার নিকট হইতে দুঃসংবাদ গোপন রাখিবার জন্য? সে ছাড়া তাঁহাদের আর কি অবলম্বন আছে; কে আছে? সেই একমাত্র সন্তানের মৃত্যুশোকে কাতর, স্নেহশীল পিতৃব্য!

২২৫