কেহ একদিনে আপনার স্বভাব পরিবর্ত্তিত করিতে পারে না। তাই সদ্বংশসম্ভূতা রমণী যখন আপনার ভ্রম বুঝিতে পারেন, তখন তিনি প্রায়শ্চিত্ত করিতে আরম্ভ করেন। আর কাহাকেও তাহা বুঝাইতে হয় না। আর কেহ সে ভ্রান্তির কথা জানিতে না পারিলেও রমণী আপনি আপনার হৃদয়কে পীড়িত—দলিত করেন।
বিজন কক্ষে বসিয়া চপলা ভাবিতে লাগিল। হৃদয় দগ্ধ হইয়া যাইতে লাগিল। তাহার পর চপলা বসিয়া কাঁদিতে লাগিল।
চপলার জননী কিছুক্ষণ তাহাকে দেখিতে না পাইয়া তাহার সন্ধানে দাসী পাঠাইলেন। দাসী এ ঘর ও ঘর দেখিয়া যাইয়া সংবাদ দিল,—চপলা কাঁদিতেছে। শুনিয়া জননী দুহিতার নিকটে আসিলেন। তিনি মনে করিলেন, নলিনবিহারীর পীড়ার আশঙ্কাই দুহিতার ক্রন্দনের কারণ। তিনি কন্যাকে সান্ত্বনা দিতে আসিলেন; কিন্তু সান্ত্বনা দিতে পারিলেন না। বড় আদরের— সেই একমাত্র সন্তানকে যেন দারুণ বেদনায় ক্রন্দন করিতে দেখিয়া তিনি আপনি কাঁদিতে লাগিলেন। মাতাপুত্রী উভয়েরই নয়নে অবিরল অশ্রু বহিতে লাগিল।
বহুক্ষণ কাঁদিয়া চপলা যেন কিছু শান্ত হইল। হৃদয়ে চিন্তার স্থান ছিল না,—এখন হইল। তখন সন্ধ্যা হয় হয়। সেই রাত্রিতেই নলিনবিহারীর যাইবার কথা। চপলা ব্যস্ত হইয়া বলিল, “আমি এখনই ফিরিয়া যাইব।”
মা আহারের জন্য জিদ করিলেন। চপলা শুনিল না। সে যাইবার জন্য বড় ব্যস্ত। শেষে তাহার জননীও তাহার সহিত যাইলেন।
২৩৮