শয্যার বাহিরে; মুখে বিষম যন্ত্রণার চিহ্ন। সেই চূর্ণ কাচপাত্র,— স্বামীর সেই অবস্থা!— চপলা মুহূর্ত্তে বুঝিল, কি চেষ্টায় এ দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে। এই দুর্ঘটনাই তাহার নিষ্ঠুরতার চরম পরিণতি। সে কেমন করিয়া স্বামীকে একাকী রাখিয়া গিয়াছিল? সে কি করিয়াছে? ইহার অপেক্ষা সে আপনি কেন মরে নাই? চপলার বুক ফাটিয়া যাইতে লাগিল।
চপলার আর্তনাদে অচিরে গৃহের সকলে সেই কক্ষে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। নলিনবিহারীর চৈতন্য-সম্পাদনের চেষ্টা হইতে লাগিল।
অল্পক্ষণ পরেই চিকিৎসক আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তিনি রোগীকে পরীক্ষা করিলেন; তাহার পর ব্যস্ত হইয়া গাত্রাবরণ ফেলিয়া কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস- প্রবর্ত্তনের চেষ্টা করিতে লাগিলেন। কোনও ফল ফলিল না।
সব শেষ হইল।
সে রাত্রিতে শিশিরকুমারের নয়নে নিদ্রা আইসে নাই। সে অনিদ্র হইয়া চিন্তা করিতেছিল। তাহার হৃদয়ে বিষম দুশ্চিন্তা। চপলার কথা শুনিয়া তাহার মনে শান্তি ছিল না। চপলা কি দারুণ ভ্রান্তিবশে হৃদয়ে অতিদারুণ দুশ্চিন্তা পোষণ করিয়াছে? অতি প্রবল না হইলে সে ত রমণীর স্বাভাবিক সংযম-বন্ধন বিচ্ছিন্ন করিয়া আত্মপ্রকাশ করিতে পারে নাই! রমণীর লজ্জা যাহার গতি রোধ করিতে পারে নাই, সে কত বল সঞ্চয় করিয়াছে!
২৪৩