পাতা:নাগপাশ - হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ.pdf/২৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নবম পরিচ্ছেদ।

শূন্য গৃহ।

হৃদয়ের সব সুখ সেই চিতানলে ভস্মীভূত করিয়া সতীশচন্দ্র দেশে ফিরিল। দেশে ফিরিয়া প্রথম কয় দিন সে শিবচন্দ্রের গৃহেই রহিল। সে গৃহও শূন্য;—সে গৃহেও সুখালোক ও আনন্দকিরণ নির্ব্বাপিত। এখনও পল্লীর পৌঢ়গণ দত্তগৃহে আসিয়া থাকেন। কিন্তু গৃহে আর সে ভাব নাই। আর ক্রীড়া নাই, হাস্যপরিহাস নাই,—আনন্দ নাই। তপন মেঘাবৃত হইলে সমস্ত প্রকৃতিতে বিষাদের ছাড়া পড়ে; যে গৃহে গৃহস্বামীর মনে সুখ নাই, সে গৃহে আনন্দ আসিবে কোথা হইতে? যে গৃহে মরণের ছায়া পড়ে, সে গৃহে চাপল্য থাকে না, বিষাদগাম্ভীর্য্য আপনি আইসে।

 পূর্ব্বে গৃহকর্ম্ম শিবচন্দ্র দেখিতেন; তাঁহার সুব্যবস্থায় সংসারে কোনরূপ বিশৃঙ্খলা ঘটিতে পারিত না। কিন্তু তাঁহার আর সে সকল কার্য্যে মন নাই। তিনি কমলকে কত ভালবাসিতেন, তাহা তিনি আপনিও ইহার পূর্ব্বে বুঝিতে পারেন নাই; এখন অতি দারুণ,—মর্ম্মভেদী শোকে বুঝিলেন, সে কত প্রিয় ছিল,— জীবনে সে কি ছিল,— সে বিনা জীবন কি হইয়াছে। জ্বালার উপর জ্বালা, যে নিকটে থাকিলে, যাহাকে স্নেহবন্ধনে বাঁধিতে পারিলে এ দহন প্রশমিত হইতে পারিত, সে আজ কোথায়? সে কথা ভাবিলে হৃদয়ে যন্ত্রণা যেন দ্বিগুণ হইয়া উঠিত। অথচ সে ভাবনা আপনি আসিত, —সর্ব্বদা আসিত। শিবচন্দ্র যেন সর্ব্বদাই

২৪৫