পাতা:নাগপাশ - হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ.pdf/২৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নাগপাশ।

ঘুমাইতে পারিলেন না—শরীর অবসন্ন বোধ হইতে লাগিল। তখন আফিসেও কাযের বড় ভিড়। এই অবস্থায় এক দিন কৃষ্ণনাথকে আফিসের পক্ষ হইতে একটা মোকর্দ্দমার উপদেশ দিবার জন্য মধ্যাহ্নে উকীলবাড়ী যাইতে হইল। প্রত্যাবর্ত্তনকালে গাড়ীতেই তিনি মূর্চ্ছিত হইলেন। সর্দ্দিগর্ম্মি কাটিল বটে; কিন্তু পক্ষাঘাত দাঁড়াইল। কৃষ্ণনাথ জীবিত রহিলেন বটে, কিন্তু হায়! জীবন্মৃত।

 গৃহিণীর মৃত্যুর পর অন্তঃপুরের কার্য্যভার বড় বধূর হস্তে আসিয়াছিল। এখন বাহিরের কার্য্যভার কৃষ্ণনাথের জ্যেষ্ঠপুত্রের হস্তে আসিল। বাহিরের কার্য্য যেমন চলিতেছিল, তেমনই চলিতে লাগিল। বাহিরের কার্য্যে নিত্য নূতন পরিবর্ত্তন হয় না, —নিত্য নূতন ঘটনা ঘটে না;—কাযেই বাহিরের কার্য্যে কোনও গোল ঘটিল না। বিশেষ জ্যেষ্ঠ সর্ব্ববিষয়ে বিনোদবিহারীর সুবিধা দেখিতেন। কিন্তু যেমন সমস্ত দেহের শক্তি হৃদয়ে চালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়, তেমনই সংসারের প্রকৃত কার্য্য অন্তঃপুরেই সম্পাদিত হয়। সেখানে অতি তুচ্ছ কার্য্য হইতে অতি গুরু ফল ফলিয়া থাকে। মধ্যমা বধূ শাশুড়ীর যে কর্ত্তৃত্ব অস্বীকার করিতে পারিতেন না, বড় বধূকে সেই কর্ত্তৃত্বদানে তাঁহার আগ্রহ ছিল না। বড় বধূ সর্ব্ব বিষয়ে তাঁহার সুবিধা দেখিলেও তিনি সন্তুষ্ট হইতে পারিতেন না। কাযেই সংসার ক্রমে প্রধানহীন সাধারণতন্ত্রের অবস্থা প্রাপ্ত হইতে লাগিল। বড় বধূর সর্ব্বাপেক্ষা অধিক আশঙ্কা— পাছে মধ্যমা বধূ কোনরূপে শোভার সহিত অসদ্ভাব করেন। শাশুড়ীর সে আশঙ্কা

২৫৭