পাতা:নাগপাশ - হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ.pdf/২৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নাগপাশ ।

 শিবচন্দ্র কিছু বলিলেন না বটে, কিন্তু নবীনচন্দ্র বলিলেন, “দিদি, এই সময় কি আমাদের ছাড়িয়া যাইবে?” মুখে আর কথা ফুটিল না; কণ্ঠ যেন রুদ্ধ হইয়া আসিল। সে কথা শুনিয়া পিসীমা চক্ষুর জল ছাড়িয়া দিলেন। কয় দিন আর সে কথা উঠিল না।

 কিন্তু শূন্যহৃদয়ে সেই শূন্যগৃহে বাস সত্য সত্যই পিসীমা’র আর সহ্য হইতেছিল না। নবীনচন্দ্রও আর কি বলিবেন? শেষে তিনি সতীশচন্দ্র ও সতীশচন্দ্রের জননীর সহিত পরামর্শ করিলেন। সতীশচন্দ্র পরদিন দত্তগৃহে আসিল; অমলকে সঙ্গে লইয়া আসিল। স্নেহশীলা পিসীমা’কে সতীশচন্দ্র বিশেষ জানিত। সতীশচন্দ্র ফিরিয়া যাইতে চাহিলে পিসীমা বলিলেন, “অমল আজ থাকুক।” সতীশ বলিল, “থাকুক।” তাহার পর সে পিসীমা’কে বলিল, “আপনি নাকি আমাদের সব মায়া কাটাইয়া যাইতেছেন?” পিসীমা কাঁদিয়া ফেলিলেন। হায়! মায়া কাটাইতে পারিলে আজ কি আর এত কষ্ট হইত? মায়াতেই ত যাতনা! সতীশচন্দ্র বলিল, “সবই ত প্রায় শেষ হইয়াছে। এখন আর যেটুকু অবশিষ্ট আছে, তাহা শেষ করিয়া কি হইবে?” বলিতে বলিতে সতীশচন্দ্রের হৃদয়ে পূর্ব্বস্মৃতি সমুজ্জ্বল হইয়া উঠিল। তাহার চক্ষু জলে ছলছল করিতে লাগিল। পিসীমা’র দুই নয়নে ধারা বহিতে লাগিল।

 সে রাত্রিতে পিসীমা’র নিদ্রা হইল না। দুইখানি পরিচিত মুখ যেন তাঁহার চক্ষুর সম্মুখে স্থির রহিল। তিনি যাহাই করেন,—

২৭৪