সেই দুইখানি মুখ যেন তাঁহার সম্মুখে। তাহারাই তাঁহার দগ্ধজীবনে অজস্র সুখের প্রস্রবণ; —তাহারাই এই বার্দ্ধক্যে তাঁহার অজস্র দুঃখের কারণ। তাহাদিগকে লইয়াই তিনি সব ভুলিয়াছিলেন;—আজ তাহারাই তাঁহার সব দুঃখের কেন্দ্র। যে দিন জীবনপ্রভাতের সকল আশার শ্মশান শ্বশুরের শূন্য ভিটা হইতে শূন্যহৃদয়ে পিতৃগৃহে আসিয়াছিলেন, সে দিন কল্পনাও করিতে পাবেন নাই, —আবার নূতন আশা অবলম্বন করিতে হইবে, আবার নূতন সংসার আপনার করিয়া আপনি তাহাতে জড়িতা হইবেন। কিন্তু সে দিন যাহা কল্পনারও অতীত ছিল, ক্রমে তাহাই সত্যে পরিণত হইয়াছিল। ভ্রাতুষ্পুত্ত্র ও ভ্রাতুষ্পুত্ত্রীর প্রতি স্নেহ যেন তাঁহাকে নূতন জীবন দিয়াছিল। শিশুর প্রতি স্নেহে অঘটন সংঘটিত হয়। তাই—সেই কমল-নয়নের কোমল দৃষ্টিতে,—সেই প্রসারিত ক্ষুদ্র করের আহ্বানে, —সেই কুসুমোপম ওষ্ঠাধরের অস্ফুট কাকলীতে মানবের কঠোর কর্ত্তব্য, বিষম বৈরাগ্য, অটল অভিলাষ—সবই ভাসিয়া যায়,— পাষাণে প্রবাহিণী প্রবাহিত হয়,— নীরস সরস, ও শুষ্ক আর্দ্র হয়, অসম্ভব সম্ভব হয়,—নূতন জীবন বিকশিত হয়।
তাহার পর আবার যখন তাহাদের প্রতি স্নেহে দহনতপ্ত হৃদয় শীতল হইয়াছিল,—শূন্য হৃদয় পূর্ণ হইয়াছিল;—তিনি সব ভুলিয়াছিলেন—তখন কে জানিত,বার্দ্ধক্যে এই অসহ যন্ত্রণা সহ্য করিতে হইবে,— দহনজ্বালা দ্বিগুণ হইবে— শূন্যহৃদয় শূন্যতর হইবে?
২৭৫