পাতা:নাগপাশ - হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ.pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নাগপাশ।

প্রাঙ্গনের মধ্য দিয়া উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত একটি পথ; পথ উত্তরে বাটীর খিড়কীর দ্বার পর্য্যন্ত গিয়াছে। এই দ্বিধাবিভক্ত প্রাঙ্গনের পূর্ব্বার্দ্ধে পথিপার্শ্বে বৃতি গঠিত করিয়া মধ্যে ভূমিখণ্ডে শবজীর বাগান করা হইয়াছে। পশ্চিমার্দ্ধে গোশালা। গোশালার সম্মুখে অনাবৃত ভূমিতে এক স্থানে মৃত্তিকা কিছু উচ্চ করিয়া তাহার মধ্যে কয়টি বৃহৎ মৃৎপাত্র প্রোথিত। কয়টি গাভী সেই সকল পাত্রে প্রদত্ত আহার্য্য আহার করিতেছে। অদূরে একটি গোবৎস এক গুচ্ছ বিচালি মুখে লইয়া কি দেখিতেছে। একটি গাভী সম্প্রতি প্রসূতা হইয়াছে; তাহার দুগ্ধ সেদিন প্রথম পান করা হইবে। নবীনচন্দ্র স্বয়ং দাঁড়াইয়া দোহন পর্য্যবেক্ষণ করিতেছেন। গাভী বৎসের গাত্র লেহন করিতেছে; স্নেহরসে তাহার আপীন পূর্ণ হইয়া উঠিতেছে। গোশালার ভৃত্য ইহার পার্শ্বে বসিয়াছে, দুই জানুর মধ্যে মার্জ্জিত, উজ্জ্বল পাত্র রক্ষা করিয়া দোহন করিতেছে। উষ্ণ দুগ্ধধারা সবেগে ভাণ্ডে পতিত হইয়া অমল শুভ্র ফেনহাস্যময় হইয়া উঠিতেছে।

 লক্ষণ আসিয়া নবীনচন্দ্রকে সংবাদ দিল, বড়কর্ত্তা ডাকিতেছেন। নবীনচন্দ্র বলিলেন, “আমি এখনই যাইতেছি।” কিন্তু শিবচন্দ্রের আর বিলম্ব সহিল না; তিনি পত্র লইয়া স্বয়ং আসিয়া ডাকিলেন, “নবীন!”

 “যাই, দাদা!” বলিয়া নবীনচন্দ্র দোহনকারীকে বলিলেন, “দেখিস্, যেন বৎসের জন্য পর্য্যাপ্ত দুগ্ধ থাকে।”

 দুই ভ্রাতা বহির্বাটীর অভিমুখে চলিলেন।

৪৭