পাতা:নাগপাশ - হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ.pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নাগপাশ।

স্পর্শ করেন নাই, যে যন্ত্র যে চাহিয়াছে, সে যন্ত্র তাহাকেই দিয়াছেন।

 কৃষ্ণনাথের বৃহ্ৎ বৈঠকখানা আজ বিশেষরূপ সুসজ্জিত; কুসুমে, আলোকে, আবরণযুক্ত চিত্রে— যে বৃহৎ কক্ষ মনোরম। আর সেই সুসজ্জিত, আলোকোজ্জ্ব্ল কক্ষে নিপূণ বাদকের হস্তে বাদ্যযন্ত্রের মধুর ধ্বনি, সুগায়কের কণ্ঠোদ্ভূত সুস্বরলহরী।

 কিছুক্ষণ সঙ্গীতের পর কৃষ্ণনাথ নবীনচন্দ্রকে বলিলেন, “বেহাই! অনুগ্রহ করিয়া একবার গাত্রোত্থান করিতে হইবে।”

 কৃষ্ণনাথ ও শ্যামাপ্রসন্ন একান্ত জিদ করিতে লাগিলেন,—মিষ্টমুখ করিতেই হইবে। অনন্যোপায় হইয়া নবীনচন্দ্র উঠিলেন।

 পার্শ্বের কক্ষে আসিয়া নবীনচন্দ্র দেখিলেন, বিপুল আয়োজন;—বিবিধ রৌপ্যপাত্রে বহুবিধ আহার্য্য ও পানীয় সজ্জিত। সে সকলের সদ্ব্যবহার করা একের সাধ্যাতীত। নবীনচন্দ্র ভাবিলেন, সহরে আহারের আয়োজন প্রধানতঃ দেখাইবার জন্য।

 আহারের সময় শ্যামাপ্রসন্ন আবার বিবাহের কথার উত্থাপন করিলেন। অন্য কথার মধ্যে কৃষ্ণনাথ বলিলেন, “আমি জামাতাকে দ্রব্যে বলুন বা নগদে বলুন, চারি সহস্র টাকা দিতে প্রস্তুত আছি।”

 স্বভাবতঃ বিনয়ী নবীনচন্দ্রের হৃদয়ে একটা কি ছিল, যাহা অন্যায় সহ্য করিতে পারিত না, আত্মসম্মানে আঘাত সহ্য করিত না। তিনি বলিলেন, “আমরা বড়মানুষ নহি; কিন্তু পুত্ত্রের বিবাহ দিয়া টাকা লইতে পারিব না। শুনিয়াছি, পুত্ত্রবিক্রয়প্রথা সহরে প্রচলিত হইয়াছে; কিন্তু আমাদের পল্লীগ্রামে যে কয় দিন,

৫৯