পাতা:নাগপাশ - হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ.pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নাগপাশ।

বসিল। মা প্রাঙ্গনের অপর দিকে পাকশালায় যাইয়া কমলকে বলিয়া আসিলেন, “বৌমা, ভাত দাও; সতীশ আসিয়াছে।” ফিরিয়া আসিয়া মা পুত্ত্রের আহারের আয়োজনে আসনাদি যথাস্থানে প্রদান করিলেন। এই সময় পার্শ্বের কক্ষে সতীশচন্দ্রের বর্ষমাত্রবয়স্ক পুত্ত্র কাঁদিয়া উঠিল। মা তাহাকে আনিলেন। এ দিকে কমল অন্নব্যঞ্জনাদি দিয়া গেল। সতীশচন্দ্র আহার করিতে বসিল। মা পৌত্ত্রকে অঙ্কে লইয়া তাহার নিকট বসিলেন; প্রদীপটি উস্কাইয়া দিলেন। মাতাপুত্ত্রে কত কথা হইতে লাগিল।

আহারান্তে সতীশচন্দ্র বহির্বাটীতে আসিল। বসিবার ঘরে সেজে গেলাস জ্বলিতেছিল; সতীশচন্দ্র একখানি পুস্তক লইয়া পাঠ করিতে লাগিল। অল্পক্ষণ পরে দুই জন কৃষক আসিয়া উপস্থিত হইল। তাহারা একটা নূতন ফসলের চাষের কথা জানিতে আসিয়াছিল। সতীশচন্দ্রের উৎসাহে ও পরামর্শে তাহারা অল্পে অল্পে এইরূপ কার্য্যে প্রবৃত্ত হইতেছিল। সতীশচন্দ্র তাহাদিগকে ব্যবস্থা দিত, আবশ্যক স্থলে অর্থসাহায্যও করিত। সতীশচন্দ্র তাহাদিগকে জ্ঞাতব্য বিষয় বুঝাইয়া দিল; তাহারা বুঝিল। বাঙ্গালার কৃষক পরিচিত ও পরিজ্ঞাত পুরাতন পথ ত্যাগ করিয়া অপরিচিত ও অপরিজ্ঞাত নূতন পথে যাইতে আগ্রহ প্রকাশ করে না, সে রক্ষণশীলতা নিন্দনীয় নহে। সে নির্ব্বোধ নহে। কৃষিবিষয়ে তাহার অভাব, আবশ্যক ও কর্ত্তব্য বুঝিতে তাহার বিলম্ব ঘটে না। কেবল অবস্থায় কুলায় না বলিয়াই সে সর্ব্ববিধ উন্নতি সাধন করিতে পারে না।