পাতা:নাগপাশ - হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ.pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নাগপাশ ।

শীল তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্থায়ী হইয়াছিল, তাহা রমণীর সৌন্দর্য্যে শোভন নহে। সমবয়সী শোভার সহিত চপলার সখ্যভাব ছিল। শ্বাশুড়ীর কথায় অন্য বধূরা এখন শোভার নিকট তাহার শ্বশুরালয়ের আচার ব্যবহারের অভিনয়দর্শনে নিরস্তা হইলেন, তখনও তাহাকে রুদ্ধদ্বার কক্ষে চপলার নিকট সে অভিনয় করিতে হইত। চপলা হাসিয়া গড়াইয়া পড়িত। পুষ্করিণীতে স্নান, পূর্ণকলসকক্ষে গৃহে প্রত্যাবর্ত্তন প্রভৃতি পল্লীগ্রামের প্রচলিত প্রথা জানিয়া চপলা বিস্মিতা হইত; বলিত, “ঠাকুরঝি, তুমি কেমন করিয়া সেই সূর্য্যমামার দেশে ঘর করিতে যাইবে?” শোভা বলিত, “যখন যাইতে হইবে, তখন সে কথা হইবে।” চপলা বলিত, “তুমি যাইও না।” যেন যাওয়া না যাওয়া সম্পূর্ণরূপে তাহারই মতের উপর নির্ভর করিতেছে!

 প্রভাতের বিবাহের পরই কৃষ্ণনাথ ইচ্ছা করিয়াছিলেন, জামাতা আর ছাত্রাবাসে না থাকিয়া তাঁহার গৃহে আসিয়া বাস করে। কিন্তু তিনি সে ইচ্ছা প্রকাশ করিবার পূর্ব্বেই শিবচন্দ্র পুত্ত্রকে বলিয়াছিলেন, সে যেন ছাত্রাবাসেও কাহারও সহিত না মিশিয়া অন্য কার্য্যে সময় নষ্ট না করিয়া পাঠে বিশেষ মন দেয়—পরীক্ষার আর এক বৎসরও নাই। বরং তাঁহার ইচ্ছা ছিল, প্রভাত শ্বশুরালয়ের অত নিকটে না থাকিয়া একটু দূরে থাকে। কারণ, তাহার উপর সরলহৃদয় নবীনচন্দ্রের যে পরিমাণ বিশ্বাস ছিল, শিবচন্দ্রের সে পরিমাণ বিশ্বাস ছিল না। তবে ঐ ছাত্রাবাসে দেশস্থ বহু ছাত্র আছে বলিয়া শিবচন্দ্র

৭৭