পাতা:নানাচর্চা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহাভারত ও গীতা ዓ » আমার বিশ্বাস, বৰ্ত্তমান মহাভারতের কতক অংশ “ভারতের” ভিতর পূরে দেওয়া হয়েছে, এবং অনেক অংশ তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। প্ৰক্ষিপ্ত অংশের বিচার এখন স্থগিত রেখে, যদি আমরা তার সংযোজিত অংশকে ভারতকাব্য থেকে বিযুক্ত করতে পারি, তাহলে আমাদের সমস্যা অনেক সরল হয়ে আসে । আমরা যদি সাহস করে’ এক কোপে মহাভারতকে দ্বিখণ্ড করে ফেলতে পারি, তাহলে আমার বিশ্বাস “ভারতকে” মহাভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারি। - বৰ্ত্তমান মহাভারতের নয় পর্ব হচ্ছে প্ৰাচীনভারত, আর তার বাদবাকী নয় পৰ্ব্ব হচ্চে অর্বাচীন-মহাভারত-এই হিসেবটাই হচ্ছে গণিতের হিসেবে সোজা ; অতএব অপণ্ডিতদের কাছে গ্ৰাহ হওয়া উচিত। প্ৰথম নয়। পর্বের ভিতর অবশ্য অনেক প্ৰক্ষিপ্ত বিষয় আছে, যা পূর্বে ভারত-কাব্যের অঙ্গস্বরূপ ছিল না ; কিন্তু শেষ নয়। পর্বের ভিতর সম্ভবতঃ এমন একটি কথাও নেই, যা পূর্বে ভারতকাব্যের অন্তভুক্ত ছিল। সংক্ষেপে, দুইখানি বই একসঙ্গে জুড়ে মহাভারত তৈরী করা হয়েছে। এ দুইখানি গ্ৰন্থকে “পূর্ব ভারত” ও “উত্তর ভারত” আখ্যা দেওয়া চলে । সকলেই জানেন যে, সংস্কৃত সাহিত্যে এরকম কাব্য আরও অনেক আছে। কাদম্বরী, কুমার-সম্ভব, মেঘদূত প্ৰভৃতির এইরকম দুটি স্পষ্ট ভাগ আছে। পূৰ্ব্বমেঘ ও উত্তরমেঘ অবশ্য একই হাতের লেখা এবং একই কাব্যের বিভিন্ন অঙ্গ। কাদম্বরীর পূর্বভােগ বাণভট্টের রচনা, আর উত্তরভাগ তীর পুত্রের। কুমার-সম্ভবের পূর্বভােগ কালিদাসের রচনা, আর উত্তরভাগ আর যারই লেখা হোক, কালিদাসের লেখা নয়।