পাচক বলিল, “আপনি সঙ্গত কথাই বলিয়াছেন, আমি অতখানি ভাবিয়া দেখি নাই।”
ডড্লে বলিলেন, “তোমার সহৃদয়তার জন্য ধন্যবাদ।—আর এক কথা,ষ্টুয়ার্ডটা কেমন আছে?”
পাচক বলিল, “তাহার অবস্থা অনেকটা আশাপ্রদ। আমি কয়েক মিনিট পূর্ব্বে তাহাকে দেখিতে গিয়াছিলাম। শুনিলাম, ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন তাহার পেট ধুইয়া দিয়াছে। একজনকে মারিতে গিয়া শয়তানটা আর একজনকে মারিয়া ফেলিয়াছিল আর কি।”
ডড্লে বলিলেন, “লোকটার পরমায়ুর জোর আছে-তাই বাঁচিয়া গেল বোধ হয়। তবে সেই মৃদু বিষে বেচারা মরিত কি না ঠিক বলা যায় না। মরিলে কিন্তু ভয়ানক হৈ-চৈ পড়িয়া যাইত, মধ্যে হইতে তুমিই হয় ত মারা পড়িতে। যাহা হউক, আমি তোমার নিকট যে কতদূর কৃতজ্ঞ, তাহা বলিতে পারি না।”
পাচক প্রস্থান করিলে তিনি আর একবার ঘুমাইবার চেষ্টা করিলেন, নানা দুশ্চিন্তায় সে রাত্রে তাঁহার নিদ্রাকর্ষণ হইল না। তিনি যতই চিন্তা করিতে লাগিলেন, ততই তাঁহার উদ্বেগ বর্দ্ধিত হইতে লাগিল। জাহাজের সকল লোকের অজ্ঞাতসারে পলায়ন করা কতদূর কঠিন, তাহা বুঝিয়া তাঁহার মানসিক উৎকণ্ঠা ও চাঞ্চল্যের সীমা রহিল না। যদি অন্ধকার রাত্রি হইত, তাহা হইলেও তেমন উৎকণ্ঠার কারণ ছিল না, কিন্তু সেদিন শুক্লপক্ষ, সমস্ত রাত্রেই পরিস্ফুট, জ্যোৎস্নালোক।—এ অবস্থায় নির্বিঘ্নে সঙ্কল্প সিদ্ধির সম্ভাবনা কতটুকু?
পরদিন প্রভাতে প্রাতর্ভোজনের সময় ডড্লে পাচকের নিকট উপস্থিত হইলে সে তাঁহার সহিত তেমন মাখামাখি করিল না, অন্যান্য দিনের মত হাস্য পরিহাসও করিল না। সে অত্যন্ত গম্ভীরভাবে তাঁহাকে বসিতে বলিল, তাহার পর চতুর্দ্দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া—নিকটে কেহ নাই দেখিয়া তাঁহাকে নিম্ন স্বরে বলিল, “কি করিয়া আপনার কার্য্যোদ্ধার করিব, এই কথা ভাবিতে-ভাবিতে কাল রাত্রে ঘুমাইতে পারি নাই। আপনাকে এখন কি খাবার দিব বুঝিতে পারিতেছি না। আপনার অনুমতি হইলে আপনার ভাতের মধ্যে লুকাইয়া