দশম পরিচ্ছেদ
চন্দ্রালোকিত রাত্রি। জাহাজের খালাসীরা তখনও স্ব-স্ব কর্ম্মে ব্যস্ত ছিল। মিঃ ডড্লে জাহাজের মাথার কাছে দাঁড়াইয়া উৎকণ্ঠিত চিত্তে একবার সমুদ্রের দিকে—একবার কার্য্যনিরত খালাসীদের দিকে চাহিতেছিলেন। তাঁহার মনে হইতেছিল—জাহাজের সকল লোকই তাঁহার শত্রু, সকলেই বেন তাঁহাকে সন্দেহের চক্ষে দেখিতেছে।—জাহাজধানি ফেনঃপুঞ্জ-মুকুটিত তরঙ্গাশি বিদীর্ণ করিয়া তাহার গন্তব্য পথে ছুটিয়া চলিয়াছে। একজন কর্ম্মচারী ‘ব্রিজের’ উপর পাহারায় নিযুক্ত আছে। সে একবার পাদচারণ করিতেছে, একবার দাঁড়াইতেছে, কখনও-বা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চারিদিকে দেখিতেছে। —ইঞ্জিনের অশ্রান্ত ঘস্-ঘস্ শব্দ ভিন্ন কোন দিকে অন্য কোন শব্দ নাই।
ক্রমে রাত্রি এগারটা বাজিল।—মিঃ ডড্লে মনে করিলেন, আর বিলম্ব করা সঙ্গত নহে। এতক্ষণ তিনি ডেক পরিত্যাগ করিতে সাহস করেন নাই, কিন্তু আর ত নিশ্চেষ্ট ভাবে বসিয়া থাকা চলে না। এখনও সকল কাজই বাকি। তিনি ধীরে-ধীরে পাচকের কেবিনের দিকে চলিলেন। কেবিনের দ্বার খোলা ছিল, তিনি মস্তক প্রসারিত করিয়া দেখিলেন, পাচক তাহার শয্যায় বসিয়া কি পাঠ করিতেছে।—ডড্লে তৎক্ষণাৎ কক্ষ-মধ্যে প্রবেশ করিয়া সাবধানে দ্বার রুদ্ধ করিলেন।
পাচক পুস্তক বন্ধ করিয়া শয্যা হইতে নামিল, এবং একটি বাক্স খুলিয়া এক সুট্ পোষাক বাহির করিল। সে তাহা ডড্লেকে দেখিতে দিয়া তাঁহাকে বলিল, “আশা করি এই পোষাক আপনার অঙ্গে নিতান্ত বেখাপ্পা, দেখাইবে না। আমাদের দুই জনেরই শরীরের গঠন প্রায় এক রকম।”
ডড্লে বিনাবাক্যব্যয়ে পোষাকটি পরিধান করিলেন, তাহা তাঁহার গায়ে মন্দ মানাইল না। সেই পোষাকে তাঁহাকে আর আরবের মত দেখাইল