একাদশ পরিচ্ছেদ
কয়েক মিনিট পর্য্যন্ত কেহ কোন কথা বলিতে পারিলেন না।—যিনি যেখানে বসিয়াছিলেন, জড়ের ন্যায় সেই স্থানেই বসিয়া রহিলেন। বোটখানি সমুদ্রতরঙ্গে ভাসিতে-ভাসিতে কিছু দূরে চলিয়া গেল।হঠাৎ মিস্ এরস্কাইন উভয় হস্তে মুখ ঢাকিয়া “মাগো, মা। মা আমার।”—বলিয়া উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে রোদন করিয়া উঠিলেন।—যেন এতক্ষণ পরে তিনি তাঁহার বিপদের কথা বুঝিতে পারিলেন। পাচক ব্লেক বাহ্যজ্ঞানশূন্য, স্তম্ভিত।—সে জাহাজে আছে, কি বোটে আছে, সে-জ্ঞান পর্য্যন্ত বিলুপ্ত হইয়াছিল। কেবল ডড্লেই সম্পূর্ণ প্রকৃতিস্থ ছিলেন, তিনিই সর্ব্বপ্রথম কথা কহিলেন।
ডড্লে বলিলেন, “ব্লেক, একবার উঠিয়া মাস্তুলটায় হাত দাও ত, উহা খাড়া করিয়া বসানো যাক। বোটে পাল তুলিয়া দিয়া আমরা যত শীঘ্র দূরে যাইতে পারি—তাহার চেষ্টা করিতে হইবে। জাহাজের লোকগুলা টের পাইলেই আমাদের ধরিবার জন্য ছুটিয়া আসিবে, তখন আত্মরক্ষা করা অত্যন্ত কঠিন হইয়া উঠিবে।”
পাচক তৎক্ষণাৎ উঠিয়া মাস্তুলটা খাড়া করিল, উভয়ের চেষ্টায় মাস্তুলটি যথাস্থানে স্থাপিত হইলে তাহাতে পাল খাটাইয়া দেওয়া হইল। পালে বাতাস লাগিবামাত্র বোটখানি সমুদ্রতরঙ্গের উপর দিয়া নক্ষত্রবেগে ধাবিত হইল। ডড্লে হাল ধরিলেন। কিছুকাল পরে জাহাজখানি সুদূর সীমান্তে মসীচিহ্নের ন্যায় পরিলক্ষিত হইল। বোটখানি পশ্চিমদিগভিমুখে চলিতে লাগিল।
এতক্ষণ পরে ডড্লে মিস্ এরস্কাইনকে বলিলেন,“মিস্ এরস্কাইন, আপনি মুক্তিলাভ করিয়াছেন, তাহা বুঝিয়াছেন কি?”
মিস্ এরস্কাইন মৃদুস্বরে বলিলেন, “হাঁ, পরমেশ্বরকে ধন্যবাদ। আমি মুক্তিলাভ করিয়াছি। আপনার অনুগ্রহেই আমি আসন্ন মৃত্যুর কবল হইতে উদ্ধার