কাঁপিতেছে, চক্ষু দু’টি জবাফুলের মত লাল! তাহার ভাব-ভঙ্গি দেখিয়াই বুঝিলাম—সে মদে চুর হইয়াছে। আমার ভয় তখন শতগুণ বর্দ্ধিত হইল। সে একটা শিশি হইতে ঔষধ ঢালিয়া আমাকে খাইতে বলিল, আমি বলিলাম, ‘আমি ঔষধ খাইব না, যদি আমাকে জোর করিয়া খাওয়াইয়া দাও, তাহা হইলে আমি বাঁচিব না।’—মামা বলিল, ‘না, তোমাকে খাইতেই হইবে, খাইলে তোমার শরীর অনেক সুস্থ হইবে।’—আমি তাহার সে কথা গ্রাহ্য করিলাম না। তখন সে আমার ঘাড় ধরিয়া ঔষধটুকু আমার মুখে ঢালিয়া দেওয়ার চেষ্টা করিল, আমি মুখ বুজিয়া বসিয়া রহিলাম। মামাও ছাড়িবার পাত্র নহে, জোর করিয়া তাহা আমার মুখের ভিতর ঢালিয়া দিতে উদ্যত হইল। অগত্যা আমি তাহার হাতে এক ধাক্কা দিলাম, সেই ধাক্কায় ঔষধটুকু বিছানার উপর পড়িয়া গেল। তখন সে রাগ করিয়া বলিল, “কি, আমার অবাধ্য হইতেছিস? ঔষধটা সমস্তই ফেলিয়া দিলি। আচ্ছা থাক্ তুই, ঔষধ গিলিস্ কি না দেখিব। তুই সহজে না খাইলে জোর করিয়া খাওয়াইয়া দিব। ঔষধ না খাইলে ব্যারাম সারে? একগুঁয়ে অবাধ্য মেয়ে।”
মিস্ এরস্কাইনের কথা শুনিয়া ডড্লে ক্রোধে গর্জ্জন করিয়া উঠিলেন। বলিলেন, “লোকটা মানুষ, না জানোয়ার? সে সময় আমি যদি তাহার পশ্চাতে লুকাইয়া থাকিতাম—তাহা হইলে সেই ধাড়ি বদ্মায়েসটাকে রীতিমত সায়েস্তা করিতাম। যাহা হউক, কাল সকালে যখন সে ঔষধ লইয়া আপনার কামরায় প্রবেশ করিবে—তখন দেখিবে পাখী উড়িয়া গিয়াছে।”
মিঃ ডড্লে পাচকের দিকে চাহিয়া বলিলেন,“ব্লেক, আমি তোমার কুঠুরীতে যে চিঠি রাখিয়া আসিয়াছিলাম, সে চিঠি কোথায়? তুমি সঙ্গে লইয়া আসিয়াছ কি?”
পাচক বলিল, “না মহাশয়, আমার খাটিয়ার পার্শ্বে যে আলমারিটা আছে, তাহার উপরেই তাহা পড়িয়া আছে। আমি তাহাতে হাতও দিই নাই। যেখানে তাহা রাখিয়াছিলেন, সেইখানেই আছে। আমার কুঠুরীতে ঢুকিলেই তাহারা তাহা দেখিতে পাইবে।”