মেঘের ছায়া চঞ্চল সমুদ্র-তরঙ্গে অভ্রকান্তি বিকাশ করিতেছিল। ক্রমে বায়ুবেগ প্রবল হইয়া উঠিল। ইহা ঝটিকার পূর্ব্বলক্ষণ মনে করিয়া ডড্লে অত্যন্ত ভীত হইলেন। তিনি বুঝিলেন, ঝটিকা আরম্ভ হইলে মুক্ত-সমুদ্রে ক্ষুদ্র বোটখানি রক্ষা করা কঠিন হইবে।
ডড্লে আরও এক ঘণ্টা নৌ-পরিচালন করিলেন। তিনি সম্মুখে ঝুঁকিয়া পড়িয়া পদপ্রান্তবর্ত্তিনী মিস্ এরস্কাইনের মুখের দিকে দৃষ্টিপাত করিলেন। তিনি তখনও গাঢ় নিদ্রায় অভিভূত। ডড লে বোটের ‘গলুই’এর দিকে চাহিয়া পাচকের মাথা দেখিতে পাইলেন না, সুতরাং তিনি বুঝিলেন, সে-ও ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। তিনি তাহার নিদ্রার ব্যাঘাত করিলেন না। রাত্রিশেষে পাচক একবার মাথা তুলিয়া নিদ্রালস নেত্রে ডড্লের মুখের দিকে চাহিল, এবং ডড্লে তখনও শয়ন করিতে পান নাই দেখিয়া লজ্জিত হইয়া বোটের হাল গ্রহণের জন্য উঠিতে উদ্যত হইল, কিন্তু ডড্লে ইঙ্গিতে তাহাকে নিষেধ করিলেন, পাচক পুনর্ব্বার শয়ন করিল। ডড লে পূর্ব্ববৎ বোট চালাইতে লাগিলেন।
ক্রমে পূর্ব্বাকাশ উষালাকে আরক্তিম হইল, প্রভাতকল্পা শর্ব্বরীর তরল অন্ধকার যেন কোন্ ঐন্দ্রজালিকের মায়াদণ্ড স্পর্শে ধীরে-ধীরে অপসারিত হইল। বাযুর বেগ ক্রমে মন্দীভূত হইলেও ডড লে আশ্বস্ত হইতে পারিলেন না। সমুদ্রের পর্ব্বত-প্রমাণ উচ্চ তরঙ্গের উপর সেই বোটখানি ক্ষুদ্র ঝিনুকের মত ভাসিতে লাগিল, তরঙ্গবেগে একবার তাহা বহু উর্দ্ধে উৎক্ষিপ্ত হয়, আবার বহু নিম্নে নিপতিত হয়,—যেন মুহূর্ত্তমধ্যে সেই ক্ষুদ্র তরীখানি তাহাদিগকে লইয়া রসাতল গর্ভে প্রবেশ করিবে।—ডড্লে বহুদর্শী সুদক্ষ নাবিক ছিলেন, তাই ক্ষুব্ধ-তরঙ্গসঙ্কুল ভয়াল সমুদ্রে অতি দক্ষতার সহিত তরণী পরিচালনে সমর্থ হইলেন। নৌচালনে অসামান্য দক্ষতা না থাকিলে বোটখানি রক্ষা পাইত না। কয়েকবার উচ্ছ্বসিত জলরাশি সেই বোটের উপর দিয়া চলিয়া গেল,জলের ঝাপ টায় ডড্লের পরিচ্ছদাদি সিক্ত হইল।
প্রভাতে মিস্ এরস্কাইন ও পাচক ব্লেকের নিদ্রাভঙ্গ হইল। ছয়টার সময় তাঁহারা প্রাতর্ভোজন শেষ করিলেন। ডড্লে অনুমান করিলেন—এই এক