পাতা:নাবিক-বধূ.djvu/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একাদশ পরিচ্ছেদ
১২৫

ব্যতিক্রম দেখিলেন না, তখন তিনি পাচককে তাঁহার নিদ্রাভঙ্গের কারণ জিজ্ঞাসা করিলে সে কিছু দূরে অঙ্গুলি নির্দ্দেশ করিল। ডড্‌লে সেই দিকে চাহিয়া একখানি প্রকাণ্ড জাহাজ দেখিতে পাইলেন। জাহাজখানি এরূপ বৃহৎ যে, তাহা তিন চারি হাজার টন মাল অনায়াসে বহন করিতে পারিত। ডড্‌লে অনুমান করিলেন, তাঁহাদের বোট হইতে জাহাজখানির দূরত্ব একশত গজের অধিক নহে এমন কি, জাহাজের নামটিও স্পষ্ট পাঠ করিতে পারিলেন। —জাহাজখানির নাম, “ইউনাইটেড ইটালী।”

 ডড্‌লে ব্যগ্রভাবে বলিলেন, “জাহাজখানি এই দিকেই আসিতেছে। যেরূপ বেগে আসিতেছে, তাহা দেখিয়া মনে হইতেছে আমরা সাবধান না হইলে উহা আমাদের বোটের উপর চাপিয়া পড়িবে, উহার ঢেউ লাগিয়াও আমাদের বোটখানি ডুবিতে পারে।”—তিনি শয্যা ত্যাগ করিয়া এক লম্ফে নৌকার হা‘লের নিকট আসিলেন, এবং পাচককে সরাইয়া দিয়া ক্ষিপ্রহন্তে হা’ল গ্রহণ করিলেন।

 দেখিতে দেখিতে জাহাজখানি বোটের পাশ দিয়া চলিয়া গেল, কয়েক মুহূর্ত্ত মধ্যে প্রায় পঞ্চাশ গজ তফাতে গিয়া পড়িল। বোটখানি তাহার তরঙ্গ-তাড়নে নাগরদোলাব মত দুলিতে লাগিল। নৌকা ডোবে আর কি।—ডড্‌লে কষ্টে ধাক্কা সামলাইয়া লইয়া জাহাজখানির দিকে চাহিলেন, এবং বলিলেন, “জাহাজের লোকেরা আমাদিগকে দেখিতে পাইয়াছে, এখনই জাহাজ থামাইয়া আমাদিগকে তুলিয়া লইবে।—পরমেশ্বর বুঝি আমাদের এত কষ্টের পর মুখ তুলিয়া চাহিয়াছেন।”

 কিন্তু তাঁহার আশা পূর্ণ হইল না, দেখিতে-দেখিতে জাহাজখানি আরও দূরে চলিয়া গেল। জাহাজের লোকেরা হয় তাঁহাদের বোটখানি দেখিতে পায় নাই, না হয় তাঁহাদের জীবনরক্ষা করা আবশ্যক মনে করে নাই। মিনিটের মধ্যেই জাহাজ অদৃশ্য হইল। তাঁহাদের হৃদয়ে যে ক্ষীণ আশা-দীপ প্রজ্জ্বলিত হইয়াছিল, সঙ্গে-সঙ্গে তাহা নির্ব্বাপিত হইল। ডড্‌লে ক্ষুব্ধভাবে বলিলেন, “জাহাজের লোকগুলা আমাদের বিপদ বুঝিতে পারে নাই। কিন্তু আমাদের নিরাশ হইলে চলিবে না। পরমেশ্বর আমাদিগকে ত্যাগ করেন নাই,