পাতা:নাবিক-বধূ.djvu/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩০
নাবিক-বধু

 ডড্‌লে সেই পথটি দেখিয়া সোৎসাহে বলিলেন, “চলুন, ঐ পথ ধরিয়াই আমরা অগ্রসর হই, কিন্তু পথটি দেখিয়া মনে হইতেছে, অনেকদিন পর্য্যন্ত এ পথে লোক-যাতায়াত নাই, তথাপি এ পথ ছাডা হইবে না। যে জলে ডুবিতেছে, সে সামান্য তৃণগুচ্ছও উপেক্ষা করে না।

 ব্লেক বলিল, “এই পথে চলিয়া যদি আমরা কোন একটা সামান্য আশ্রয় পাই, তাহা হইলে রাত্রিটা কোনরকমে কাটাইতে পারি। বিশেষতঃ সন্ধ্যার অন্ধকার শীঘ্রই গাঢ় হইয়া আসিবে, আকাশে মেঘ ও ঘনাইয়া আসিতেছে, বৃষ্টি আসিলে বিপদের সীমা থাকিবে না। এ অবস্থায় যদি একখানি ভাঙ্গা কুটীরও দেখিতে পাই, তাহা হইলে সেখানে অন্ততঃ মাথাটাও বাঁচিবে।”

 তাঁহারা তিনজনে সেই সঙ্কীর্ণ পথ ধরিয়া চলিতে লাগিলেন, চলিতে চলিতে তাঁহারা একটি অনুচ্চ পাহাড়ের সানুদেশে উপস্থিত হইলেন। অল্পক্ষণ পরে সূর্য্যাস্ত হইল, অস্তমিত তপনের লোহিত রশ্মিজাল তাল নারিকেল বৃক্ষের পত্রে প্রতিফলিত হইয়া হরিদ্বর্ণ তৃণ-সমাচ্ছাদিত প্রান্তরভূমি চুম্বন করিতে লাগিল। সেই আলোকে পথ দেখিতে তাঁহাদের কোন অসুবিধা হইল না। চারিদিক নিস্তব্ধ, তাঁহাদের তিনজনের লঘু পদশব্দ ভিন্ন অন্য কোনও শব্দ তাঁহাদের কর্ণগোচর হইল না।

 ডড্‌লে চলিতে-চলিতে হঠাৎ থামিয়া একদিকে অঙ্গুলি প্রসারিত করিলেন, বলিলেন, “ঐ ওদিকে—জঙ্গলের ওপাশে সাদা মত কি দেখা যাইতেছে?”

 মিস্ এরস্‌কাইন বলিলেন, “একটা ঘরের সাদা দেওয়াল বলিয়া বোধ হইতেছে না?—হাঁ, ঘরের দেওয়ালই বটে।—এই পথ দিয়া ঐখানেই যাওয়া যাইবে।*

 তখন সকলেই সেই অরণ্যান্তরালবর্ত্তী শুভ্র প্রাচীর লক্ষ্য করিয়া চলিতে লাগিলেন। তাঁহারা সেইস্থানে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, তাহা সেই দ্বীপবাসী, অসভ্য লোকের বাসগৃহ, মাটীর দেওয়ালের বহির্দেশ চূণকাম করা, উপরে খড়ের চাল ছিল, তাহা সংস্কারভাবে ভাঙ্গিয়া খসিয়া পড়িয়াছে, চারিদিকে দেওয়াল মাত্র দাঁড়াইয়া আছে। অরণ্যের অন্তরালবর্তী তালীকুঞ্জ-বেষ্টিত সেই