না গণিয়াই যে-সে বলিতে পারিত। আমার মুখ দেখিয়াই বলিতে পারা যায় আমার বয়স অল্প, আমি যে উচ্চাভিলাষী, তাহ আমার সামরিক পরিচ্ছদেই প্রকাশ। উচ্চাভিলাষ না থাকিলে কে নৌ-বিভাগে চাকরী করিতে যায়? আর যাহারা এই চাকরী করে, তাহাদিগকে সমুদ্রে-সমুদ্রে ঘুরিয়া বেড়াইতে হয় ইহাই বা কে না জানে?—না, আপনার গণনার সিদ্ধান্তে আমি সুখী হইতে পারিলাম না।”
যুবতী বলিলেন, “কিন্তু আমার গণনা এখনও ত শেষ হয় নাই। দেখিতেছি ছদ্মবেশ ধারণে আপনার বেশ দক্ষত আছে, কিন্তু এখনও আপনি সেই দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ লাভ করেন নাই। আপনি সহজে নিরুৎসাহ হন না, আপনি যে কার্য্যে হস্তক্ষেপণ করেন—তাহা শেষ না করিয়া ছাড়েন না।”
ডড্লে বলিলেন, “আপনি অন্ধকারে ঢিল ছুড়িলেন। এই দৈববাণীতে আপনার শক্তির কোন পরিচয় পাইলাম না। ভবিষ্যতে ঘটিবে—এমন বিশেষ কোন ঘটনার উল্লেখ করিতে পারেন?”
যুবতী আরও দুই মিনিট ডড্লের করতলে দৃষ্টি সংস্থাপিত করিয়া বলিলেন, “আপনি ইতিপূর্ব্বে কয়েকবার প্রেমে পড়িয়াছিলেন, কিন্তু ফাঁদে পা দেন নাই, শক্ত জাল ছিঁডিয়া বাহিরে আসিয়াছেন। এখন আপনি বেশ নিশ্চিন্ত আছেন, কিন্তু আপনার জীবনের গতি শীঘ্রই পরিবর্ত্তিত হইবে। আপনি একটি দীর্ঘাকৃতি সুন্দরী যুবতীর প্রেমে পড়িয়া হাবুডুবু খাইবেন। আপনার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হইয়া উঠিবে, কিন্তু আপনি অশেষ মনোকষ্ট পাইলেও সেই যুবতীর প্রণয়লাভে সমর্থ হইবেন। প্রথম দর্শনের পর বিরহ, বিরহান্তে অদূরেই মিলন। তাহার পর প্রাণের আশঙ্কা, কিন্তু আপনি মরিবেন না। তবে পৃথিবীতে কেহই অমর নহে, আপনিও একদিন মরিবেন, কিন্তু খুব বড় লোক হইয়া অত্যন্ত ধুমধাম করিয়া মরিবেন।”
ডড্লে বলিলেন, “আপনার শেষ গণনাটি শ্রুতিসুখকর বটে। যদি মরিতেই হয়—তবে বড়লোক হইয়া মরাই প্রার্থনীয়। কিন্তু তাহার পর?—আপনার বিদ্যা বুঝি ঐ পর্য্যন্ত। আর কিছু গণিতে পারেন না?”