হইয়াছি তাহা বুঝিয়াছি। অতীত ঘটনাগুলি দুঃস্বপ্ন বলিয়া মনে হইতেছে, কিন্তু মিঃ ডড্লে, আপনার অনুগ্রহেই আমি পুনঃপুনঃ মৃত্যুকবল হইতে রক্ষা পাইয়াছি। আপনার এ ঋণ আমি কি করিয়া পরিশোধ করিব? কি করিয়া আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিব?”
ডড্লে তাহার হাতখানি নিজের গতের মধ্যে টানিয়া লইয়া, তাঁহার অশ্রু প্লাবিত মুখের উপর গভীর প্রেমপূর্ণ দৃষ্টি স্থাপন করিয়া বলিলেন, “মেরী, আমি যেদিন তোমাকে প্রথম দেখিয়াছি, সেই দিনই মন প্রাণ দিয়া তোমাকে ভাল বাসিয়াছি। তোমার অদৃষ্টের সহিত আমার অদৃষ্ট যেন একসূত্রে গ্রথিত। আমি যে তোমাকে কত ভালবাসি-পরমেশ্বরের অনুগ্রহে তুমি তাহার কিছু কিছু পরিচয় পাইয়াছি। যদি আমার প্রতি তোমার বিন্দুমাত্র কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ও অবকাশ থাকে—তাহা হইলে তুমি আমাকে বিবাহ করিয়া আমার ঋণ পরিশোধ করিতে পার। আমি বোধ হয় তোমার প্রেমের নিতান্ত অযোগ্য নহি। কিন্তু আগে বল, তুমি কি সত্যই আমাকে ভালবাস?
মিস্ এরসকাইন কম্পিত স্বরে বললেন, হ্যাঁ, আমি তোমাকে ভালবাসি, তুমি ভিন্ন আমার আপনার বলিতে এ সংসারে আর কেহই নাই। যদি তুমি আমাকে দয়া করিয়া গ্রহণ কর, তাহা হইলে আমি তোমাকে বিবাহ করিয়া চিরসুখী হব।”
প্রণয়ীযুগল পরস্পরের হাত ধরিয়া মৌনভাবে নৌকার উপর দাঁড়াইয়া রহিলেন। নৌকাখানি ক্রমে তীরের নিকট উপস্থিত হইল। তখন ডড্লে পাচককে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, “ব্লেক, আমরা তোমার নিকট কতদূব ঋণী, তাহা বলিতে পারি না। তোমায় সহায়তা ভিন্ন আমরা দুর্ব্বৃত্ত ল্যাম্পিয়নের কবল হইতে মুক্তিলাভ করিতে পারিতাম না। তোমার মত হিতৈষী বন্ধু জীবনে কখন পাইব না, তোমার উপকার জীবনে ভুলিব না। তোমার জীবিকানির্ব্বাহের যথাযোগ্য ব্যবস্থা করিয়া দিব।”
ব্লেক কোন উত্তর দিল না, কিন্তু তাহার চক্ষু অশ্রুপূর্ণ হইল।—সে মুখ ফিরাইয়া চক্ষু মুছিল।—নৌকা দশ মিনিটের মধ্যে তীরে ভিড়িল।