পাতা:নাবিক-বধূ.djvu/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
৩৯

বোটের উপর আমেদ বেন্-হাসেনের সহিত মল্লযুদ্ধে প্রবৃত্ত হইয়াছেন। তাঁহাদের ‘ফ্ল্যাগ সিপের’র একখানি ছোট ষ্টীমার অদূরে দাঁড়াইয়া ধূম্রোদ্গিরণ করিতেছে, এবং সেই ষ্টীমারখানির ডেকের উপর আধ ডজন খালাসী কয়লা ভাঙ্গিবার হাতুড়ী ও জ্বলন্ত কয়লা সরাইবার হাতা লইয়া দাঁড়াইয়া আছে, যেন সুযোগ পাইলেই তাহারা তাঁহাকে আক্রমণ করিবে।—এইভাবে উভয়ের যুদ্ধ চলিতে লাগিল, বোটখানিও মোজাম্বিক প্রণালীর অভিমুখে অগ্রসর হইল। হাঙ্গরগুলা জল হইতে মুখ তুলিয়া নির্ণিমেষ নেত্রে উভয়ের দিকে চাহিয়া রহিল, যেন উভয়ে যুদ্ধ করিতে-করিতে জলে পড়িলেই তাহাদের ফলার। তিনি আরও দেখিলেন, তাঁহার প্রতিদ্বন্দ্বীর হস্তে এক্ষানি তীক্ষ্ণধার ছুরিকা দীপ্ত সূর্য্য-রশ্মিতে ঝক্-মক্ করিতেছে, অথচ একখানি হাতপাখা ভিন্ন আত্মরক্ষার কোন সম্বল তাঁহার নিকট নাই।—তাঁহার মনে পড়িল—তিনি মিস্ এরস কাইনের হাতে সেই পাখাখানি দেখিয়াছিলেন। লাট সাহেবের বাড়ীতে নাচের দিন সেই পাখা তাঁহার হাতে ছিল।—পাখার হাতল সোণা-বাঁধা, তাহার উপর মিস্ এরস কাইনের নাম খোদিত। হঠাৎ সেই আরবটা বামহস্তে তাঁহার কণ্ঠনালি দৃঢ়রূপে আঁকড়াইয়া ধরিয়া দক্ষিণ হস্ত ঊর্দ্ধে তুলিল,এবং তাহার হস্তস্থিত ছুরিকাখানি তাঁহার কণ্ঠের নিম্নভাগে আমূল প্রোথিত করিল।—সঙ্গে সঙ্গে ডড্‌লের নিদ্রাভঙ্গ হইল। তিনি দেখিলেন, ঘর্ম্মধারায় বালিশ ভিজিয়া গিয়াছে।

 আবার তিনি চক্ষু মুদিত করিলেন, এবার তন্দ্রা আসিতে-না-আসিতে আর এক উৎকট স্বপ্ন দেখিলেন। তিনি দেখিলেন দিগন্তব্যাপী অকূল সমুদ্রে এক খানি বোট ভাসিতেছে। বোটখানি কোনও জাহাজের ডীঙ্গী। যতদূর দৃষ্টি যায় কোনদিকে কূল-কিনারা দেখা যাইতেছে না। কোনদিকে একখানিও জাহাজ নাই। তিনি প্রথমে সেই বোটে কোন লোক দেখিতে পাইলেন না; কিন্তু কিছুক্ষণ ঠাহর করিয়া দেখিবার পর—বোধ হইল, বোটের উপর একজন মানুষ রহিয়াছে। তিনি কৌতূহলের বশবর্ত্তী হইয়া বোটের আরও নিকটে উপস্থিত হইলেন, তখন তিনি বুঝিতে পারিলেন, লোকটি জীবিত নাই, মরিয়া গিয়াছে। —তিনি বোটে উঠিয়া সেই মৃতদেহটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখিতে লাগিলেন, কিন্তু