তাহাকে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করিলেন, কিন্তু সে একটি কথারও উত্তর দিল না, তালগাছের মত সোজা হইয়া দাঁড়াইয়া তাঁহার মুখের দিকে মিট্-মিট্ করিয়া চাহিতে লাগিল।—সেই দৃষ্টিতে ভয়ের চিহ্নমাত্র ছিল না, বরং স্পর্ধা ও অবজ্ঞা প্রকাশ পাইতেছিল। তাহাকে নির্ব্বাক দেখিয়া পর্টুগীজ্ গবর্ণরের ক্রোধসিন্ধু উদ্বেলিত হইয়া উঠিল। তিনি গর্জ্জন করিয়া বলিলেন, “তুই কি মতলবে রাত্রিকালে কন্সল সাহেবের ঘরে ঢুকিয়া এই ভদ্রলোকটিকে আক্রমণ করিয়াছিলি, তোর দলে কোন্ কোন্ লোক আছে,—এ কথা না বলিলে ছুরি দিয়া তোর যকৃত খণ্ড-খণ্ড করাইয়া ফেলিব।”—রাগে তাঁহার মোটা কাল গোঁফজোড়াটা ফুলিয়া উঠিল।
কিন্তু আরবটা খাতির-নদারৎ।—ভয় প্রদর্শনে কোনও ফল হইল না। তাহার মুখ হইতে একটা কথাও বাহির করিতে পারা গেল না। তখন গবর্ণর সাহেব বলিলেন, “এখন উহাকে লইয়া যাও, হতভাগা এখন কথা কহিতেছে না, কিন্তু চাবুকের চোটে উহার মুখে কথা ফুটিবে। পিঠে শপাশপ্ চাবুক পড়িবে, আর মুখে কথার খৈ ফুটিবে।—তাহার পর উহার কি শাস্তি হয়—তাহা আপনাৱা শুনিতেই পাইবেন।”
অনন্তর ডড্লে কন্সলের সহিত তাঁহার গৃহে প্রত্যাগমন করিলেন। অপরাহ্নকালে তিনি তাঁহার কক্ষে বসিয়া চিঠি-পত্র লিখিতে লাগিলেন। কিছুকাল পরে মিঃ স্পরফিল্ড হাঁপাইতে হাঁপাইতে তাঁহার সম্মুখে আসিয়া ব্যগ্রভাবে বলিলেন, “বড়ই অদ্ভুত কাণ্ড হইয়া গিয়াছে। আসামীকে আজ সকালে জেলখানায় লইয়া যাইবার সময় সে পলাইয়াছে।—এ কথা শুনিলে লাট সাহেব চটিয়া আগুণ হইবেন, কিন্তু,—”
ডড্লে বলিলেন, “সব বুঝিয়াছি।—যাহাদের ত্রুটিতে আসামী পলাইয়াছে— তিনি তাহাদের ফাঁসি দিবেন, আসামীকে ধরিতে পারিলে তাহাকে জীবন্ত গোরে পুঁতিবেন,—সব হইবে,কিন্তু তাহাকে ধরিবার জন্য তিনি আন্তরিক চেষ্ট করিবেন কি? আসামী পলাইয়াছে, সুতরাং এই ব্যাপার কি দুর্ভেদ্য রহস্য-সমাচ্ছন্ন—তাহা আর জানিবার উপায় রহিল না।