বলিষ্ঠ যুবকের পক্ষে দুই শত গজ সন্তরণ কিছুমাত্র কঠিন নহে, কিন্তু তাহাতে যথেষ্ট বিপদের আশঙ্কা ছিল, কারণ উপসাগরটি অসংখ্য হাঙ্গরে পূর্ণ, বিশেষতঃ রাত্রিকাল।—হাঙ্গরের উদরে প্রবেশ করিতে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না॥
ডড্লে অনেকক্ষণ পর্যন্ত সাঁতার দিয়া ‘ধাও’খানির পাশে উপস্থিত হইলেন। তিনি লক্ষ্য করিয়া দেখিলেন, নোঙ্গরের কাছে পাহারার কোন বন্দোবস্ত নাই, ইহাতে তিনি অপেক্ষাকৃত নিশ্চিন্ত হইলেন, এবং অতি কষ্টে ধাও’র উপর আরোহণ করিলেন। অতঃপর তিনি সিক্তবস্ত্রে ধাওর এক প্রান্তে দাঁড়াইয়া, কোথায় লুকাইবেন তাহাই ভাবিতে লাগিলেন। ধাওখানি ক্ষুদ্র নহে, একখানি ছোট জাহাজ বলিলেই চলে, তাহা এক শত টন মাল বহিতে পারে। তাহার দুইটি মাস্তুল। উড়লে সাবধানে চারি পদ অগ্রসর হইলেন,কিন্তু মাঝি-মাল্লা একজনকেও দেখিতে পাইলেন না। তখন তিনি ধীরে ধীরে ডেকের উপর আসিলেন, সামওয়েলি কোথায়, এবং সে তাহার আগমন লক্ষ্য করিয়াছে কি না, তাহা তিনি বুঝিতে পারিলেন না। তিনি অত্যন্ত চঞ্চল হইলেন, বুঝিলেন, যদি দৈবাৎ ধরা পড়েন, তাহা হইলে আর রক্ষা নাই। সামওয়েলির সহিত কোথায় কিরূপে তাহার সাক্ষাৎ হইবে, তাহা অনুমান করিতে না পারিয়া তাহার উৎকণ্ঠা বর্ধিত হইল।
তখন আর রাত্রি ছিল না। নৈশ-অন্ধকার ক্রমে তরল হইতে লাগিল, এবং প্রভাতকল্পা সর্ব্বরীর পাণ্ডুর আভা ক্রমে হ্রাসপ্রাপ্ত হইয়া উষার আলোকে চতুর্দিক ধীরে-ধীরে আলোকিত হইতে লাগিল। আকাশে যে কয়েকটি শী প্রভ নক্ষত্র দেখা যাইতেছিল,তাহারা একে একে অদৃশ্য হইল, এবং পূর্বাকাশের বর্ণ প্রতিমুহূর্তে পরিবর্তিত হইতে লাগিল। অবশেষে পূর্বগগন নানাবণে সুরকি করিয়া দিবাকরের হিরন্ময় কিরীটের উজ্জ্বল আভা দিগন্তে প্রসারিত লি। প্রভাতের সঙ্গে সঙ্গে বাযুবেগ প্রবল হইল। বায়ুবেগে ধাওখানি, দুলিতে আরম্ভ করিল। তাহা লক্ষ্য করিয়া নীচের ডেক হইতে কে একজন সুপ্তোখিতের ন্যায় জডিতস্বরে—সেলিম, নুরবক্স, কেফাৎ—প্রভৃতি মাল্লাদের নাম। মিয়া ডাকাডাকি করিতে লাগিল।—তাহার আদেশে মাল্লারা একে একে