তাহার নিকটে আসিয়া দাঁড়াইল, এবং তাহার ইঙ্গিতে সকলে পশ্চিমাস্য হইয়া নমাজে বসিল।
মাঝি-মাল্লাদিগকে নমাজে প্রবৃত্ত দেখিয়া মিঃ ডড্লে মনে করিলেন, তাহাদের সম্মুখে হঠাৎ আত্মপ্রকাশ করিবার ইহাই উৎকৃষ্ট অবসর। তাহারা নমাজ শেষ করিয়া উঠিবে—এমন সময় মিঃ ডড্লে জাহাজের উপরের ডেকে দণ্ডায়মান হইয়া মাল্লার মহিমাজ্ঞাপক একটি ‘বয়েৎ’ উচ্চৈঃস্বরে আবৃত্তি করিতে লাগিলেন; সঙ্গে সঙ্গে তাঁহার উভয় হস্ত মাথার উপর সবেগে ঘুরিতে লাগিল!—মাঝি-মাল্লারা তাঁহার কণ্ঠস্বর শুনিয়া ক্ষণকাল কিংকর্ত্তব্যবিমূঢ় হইয়া বিহ্বলভাবে বসিয়া রহিল।—তাহার পর তাঁহাকে দেখিবার জন্য সেইদিকে মস্তক প্রসারিত করিল। তাহারা দেখিল, একটা পাগল ডেকের উপর দাঁড়াইয়া তারস্বরে কোরাণ-সরিফের ‘বয়েৎ’ আওড়াইতেছে!—লোকটা কিরূপে ‘ধাও’র উপর আসিল—তাহারা তাহা স্থির করিতে পারিল না—পাগলটার উদ্দেশ্য কি, তাহার আকস্মিক আবির্ভাবের কি ফল—এতৎসম্বন্ধে তাহারা তর্কবিতর্ক করিতেছে, এমন সময় একটি বৃদ্ধ একটা কামরা হইতে বাহির হইয়া তাহাদের সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইল। বৃদ্ধ হইলেও লোকটা যে বেশ বলবান—তাহা বুঝিতে ডড্লের বিলম্ব হইল না। তাহার চক্ষু দু’টির দিকে চাহিয়াই তিনি বুঝিতে পরিলেন, লোকটা অত্যন্ত ক্রূরপ্রকৃতি ও চতুর।—এই ব্যক্তিই যে আমেদ বেন্-হাসেন, এ সম্বন্ধে তাঁহার বিন্দুমাত্র সন্দেহ রহিল না—তিনি মাথার উপর হাত ঘুরাইতে ঘুরাইতে পুনর্ব্বার আর একটি ‘বয়েৎ’ তার স্বরে আবৃত্তি করিলেন। তাহার পর তিনি লাফাইতে লাফাইতে আমেদ বেন্-হাসেনের সম্মুখে উপস্থিত হইয়া তাহার পদপ্রান্তে নিপতিত হইলেন। তিনি অভিনয়ের চরমোৎকর্ষ প্রদর্শন করিলেও তাহার বুকের মধ্যে কাঁপিতেছিল, কারণ তিনি বুঝিয়াছিলেন, যদি সেই ধূর্ত্ত আরব কোনরূপে তাঁহার প্রতারণা বুঝিতে পারে, তাহা হইলে মুহূর্ত্তমধ্যে তাঁহার প্রাণান্ত হইবে।—তিনি তৎক্ষণাৎ উঠিয়া বসিলেন, এবং সম্মুখে ঝুঁকিয়া পড়িয়া ঘন-ঘন শিরঃসঞ্চালন করিতে করিতে কোরাণের বয়েৎ আবৃত্তি করিতে লাগিলেন।