আমেদ বেন্-হাসেন এই দৃশ্য দেখিয়া কিয়ৎকাল স্তম্ভিতভাবে দাঁড়াইয়া রহিল, তাহার পর ছদ্মবেশী ডড্লেকে জিজ্ঞাসা করিল, “তুই কোথা হইতে আসিয়াছিস্? আমার এই ধাওর উপরেই বা কি করিয়া আসিলি?”
পাগল বলিল, “কাহার হুকুমে লম্বা ঘাসের ভিতর দিয়া সন্-সন্ করিয়া বাতাস বহিয়া যায়? বোকা লোকের মুখ দিয়া কে জ্ঞানের কথা বাহির করেন?—খানা দেও সাহেব, বড় ভুক্ লাগিয়াছে। আল্লা তোমার মঙ্গল করিবেন; তুমি যেখানে যাইবে—তোমার নসিবে সোণা ফলিবে।”
ডড্লে বুঝিলেন, সামওয়েলির কথা সত্য। তাঁহার কথা শুনিয়া আমেদ বেন্-হাসেনের মুখ প্রফুল্প হইল, সে বুঝিল, তাহার শুভযাত্রার নিদর্শন স্বরূপ আল্লাই এই পাগলাটাকে আসমান হইতে তাহার ধাওর উপর নামাইয়া দিয়াছেন!
আমেদ বেন্-হাসেন ক্ষণকাল নিস্তব্ধ থাকিয়া বলিল, “আমি তোমাকে খাইতে দিব, আশ্রয়ও দিব; আমার মনের বাসনা পূর্ণ হইলে তোমার সকল অভাব দূর করিব। কিন্তু যদি আমার অমঙ্গল হয়, যদি তোমার কথার খেলাপ হয়, তাহা হইলে আমি তোমাকে ‘জবে’ করিব।”
ডড্লে তাহার কথায় কর্ণপাত না করিয়া পূর্ব্ববৎ শিরঃসঞ্চালন পূর্ব্বক কোরাণের আর একটি ‘বয়েৎ’ আবৃত্তি করিতে লাগিলেন। তিনি মনে মনে খুসী হইলেও তাঁহার মানসিক চাঞ্চল্য দূর হইল না। কার্য্যোদ্ধারের যে এখনও অনেক বিলম্ব!—ইতিমধ্যে কখন্ কি বিপদ ঘটিবে কে বলিতে পারে?
বায়ুর বেগ ক্রমেই প্রবল হইতেছে দেখিয়া, আমেদ বেন্-হাসেন পাল তুলিয়া দিতে বলিল।—মাঝি-মাল্লারা নোঙ্গর তুলিয়া ‘ধাও’র পাল খাটাইয়া দিল। ধাওখানি হেলিয়া-দুলিয়া মুক্ত সমুদ্রের অভিমুখে অগ্রসর হইল। ডড্লে ধাওর গন্তব্য-পথ লক্ষ্য করিয়া বুঝিলেন, তাহা জাঞ্জিবারের দিকে চলিয়াছে। অনুকূল বায়ুপ্রবাহে ধাওখানি অতি দ্রুতবেগে চলিতে লাগিল।
ডড্লে যেখানে বসিয়া ছিলেন, সেখান হইতে উঠিলেন না; একইভাবে মাথা নাড়িয়া কখন উচ্চৈঃস্বরে কখন-বা বিড়্বিড়্ করিয়া ‘বয়েৎ’ আবৃত্তি