পাতা:নাবিক-বধূ.djvu/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

মস্তকে গুরুতর আঘাত পাইয়া ডড্‌লে ‘ধাও’র ডেকের উপর মূর্চ্ছিত হইবার পর দীর্ঘকাল পর্য্যন্ত তাঁহার চেতনা-সঞ্চার হইল না। সংজ্ঞালাভ করিয়া তিনি সর্ব্বাঙ্গে অসহ্য বেদনা অনুভব করিলেন। তিনি উঠিয়া বসিবার চেষ্টা করিলেন, কিন্তু উঠিতে পারিলেন না, দেখিলেন, তাঁহার হস্তপদ দৃঢ়রূপে বন্ধুবদ্ধ। উঠিয়া বসা দূরের কথা, তাঁহার নড়িবার পর্য্যন্ত সামর্থ্য নাই। তখন মধ্যাহ্নকাল অতীতপ্রায়, সূর্য্যকিরণ তাঁহার মুখের উপর পড়িতেছিল। প্রখর রৌদ্রসম্পাতে তিনি চক্ষুতে অসহ্য জ্বালা অনুভব করিলেন। সর্ব্বাঙ্গ যেন পুড়িয়া যাইতেছিল। তাঁহার জিহ্বা ফুলিয়া আড়ষ্ট হইয়া গিয়াছিল। তিনি মাথা তুলিবার চেষ্টা করিয়াও কৃতকার্য্য হইতে পারিলেন না। তিনি বুঝিতে পারিলেন, তিনি ছদ্মবেশে যে ‘ধাও’র উপর ছিলেন, তাহা হইতে তাঁহাকে স্থানান্তরিত করিয়া একখানি ক্ষুদ্র নৌকায় স্থাপন পূর্ব্বক নৌকাখানি সমুদ্রে ভাসাইয়া দেওয়া হইয়াছে।—নৌকায় মাঝি-মাল্লা কেহই নাই, অকূল সমুদ্রে নৌকাখানি ভাসিয়া চলিয়াছে।—তিনি বুঝিলেন, ইহা আমেদ বেন্-হাসেনেরই কার্য্য। সে কোনরূপে তাঁহার গুপ্ত অভিসন্ধি বুঝিতে পারিয়া বৈরনির্য্যাতনের জন্য এই পন্থা অবলম্বন কবিয়াছে।—কিন্তু সে তাঁহাকে সেই স্থানে হত্যা করিল না কেন? তাহা হইলে ত মুহূর্ত্তে সকল যন্ত্রণার অবসান হইত। বোধ হয় এই ভাবে যন্ত্রণা দিয়া হত্যা করাই তাহার অভিপ্রেত। হঠাৎ তাঁহার মনে পডিল, মোজাম্বিকে কন্সলের গৃহে যে দিন রাত্রিকালে অজ্ঞাতনামা আততায়ী কর্ত্তৃক আক্রান্ত হন—সেই রাত্রে তিনি যে দুঃস্বপ্ন দেখিয়াছিলেন, সেই স্বপ্ন আজ সফল, হইয়াছে। তিনি স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন, তাঁহার মৃতদেহ একখানি খোলা নৌকায়, অকুল সমুদ্রে ভাসিয়া যাইতেছে—এখন পর্য্যন্ত তাঁহার মৃত্যু হয় নাই বটে, কিন্তু তাহার যে আর অধিক বিলম্ব নাই—ইহা অনুমান করা কঠিন হইল না।