মিঃ ডড্লে কাতরস্বরে বলিলেন, “হে পরমেশ্বর, আর আমাকে যন্ত্রণা দিও না, দয়া করিয়া এই মুহূর্ত্তেই আমার জীবনান্ত কর। আর ত এ কষ্ট সহ্য হয় না।”
কিন্তু ইচ্ছা করিলেই ইহজীবনের অবসান হয় না, পরমেশ্বর তাঁহার প্রার্থনা পূর্ণ করিলেন না। তিনি যন্ত্রণায় ছট্-ফট্ করিতে লাগিলেন। সহসা নৌকার খোলের ভিতর হইতে কে যেন অস্ফুটস্বরে আর্ত্তনাদ করিয়া উঠিল। সেই আর্ত্তনাদ তাঁহার শ্রবণবিবরে প্রবেশ করিবামাত্র তিনি সেই শব্দ লক্ষ্য করিয়া কাণ পাতিয়া রহিলেন। তাঁহার মনে হইল, এই স্বর তাঁহার পরিচিত। কিন্তু সেই আর্তস্বর তিনি আর শুনিতে পাইলেন না, তখন ক্ষীণকণ্ঠে বলিলেন, “সামওয়েলি, তুমি কি আমার মত এই নৌকায় বাঁধা আছ?—সামওয়েলি।”
ডড্লের কণ্ঠস্বর সামওয়েলির কর্ণে প্রবেশ করিল, কিন্তু তাহার অবস্থা অধিকতর শোচনীয় হইয়াছিল, সে কোন কথাই বলিতে পারিল না, একবার গোঁঙাইয়া সাড়া দিল মাত্র।—ইহাতেই তিনি বুঝিতে পারিলেন, দুরন্ত আরব তাঁহাকে ও সামওয়েলিকে হাত-পা বাঁধিয়া এই নৌকায় তুলিয়া নৌকাখানি সমুদ্রে ভাসাইয়া দিয়াছে।—কয়দিন ধরিয়া তাঁহারা সমুদ্রে ভাসিয়া চলিয়াছেন কে বলিবে?—উদরে অন্ন নাই, শরীর অতি দুর্ব্বল, পিপাসায় কণ্ঠ শুষ্ক, হস্ত পদের বন্ধন এরূপ দৃঢ় যে, নড়বারও সামর্থ্য নাই, রজ্জু মাংস কাটিয়া বসিয়াছে, বন্ধন-স্থান ফুলিয়া উঠিয়াছে, শোণিত-সঞ্চালন রহিত হওয়ায় শিরাগুলি টন্-টন্ করিতেছে, চক্ষু মেলিবারও শক্তি নাই। ডড্লের মাথা ঘুরিতে লাগিল, বুদ্ধিভ্রংশ হইল, অবশেষে তাঁর সংজ্ঞা বিলুপ্ত হইল। কিছুকালের জন্য সকল যন্ত্রণার অবসান হইল।—সামওয়েলির অবস্থা তাঁহার অবস্থা অপেক্ষাও শোচনীয় হইয়াছিল, দারুণ পিপাসায় অস্থির হইয়া সে ক্রমাগত জল জল করিয়া আর্ত্তনাদ করিতেছিল। তাহার পর তাহারও চেতনা বিলুপ্ত হইয়াছিল।
প্রায় দুই ঘণ্টা এই ভাবে অতিবাহিত হইল, তাহার পর পুনর্ব্বার ডড্লের চেতন’-সঞ্চার হইল। তিনি চক্ষু খুলিয়া ঊর্দ্ধাকাশে দৃষ্টিপাত করিলেন,সূর্যের প্রখর কিরণ তাঁহার চক্ষুর উপর প্রতিফলিত হইল, তিনি চক্ষু মুদিত করিলেন। সেই