অবস্থায় তাঁহার মনে হইল—তাঁহার চক্ষুর উপর কিসের ছায়া পড়িয়াছে। মেঘ কি?—আকাশের কোন দিকে তখন ত মেঘ ছিল না।—তিনি চক্ষু মেলিয়া দেখিলেন, তাঁহার দেহের উপর একখানি বোটের প্রকাণ্ড পালের ছায়া পড়িয়াছে।—তিনি সোৎসুক-নেত্রে চাহিয়া দেখিলেন, কিছুদূর দিয়া একখানি ‘ধাও’ ভাসিয়া যাইতেছে। দেখিবামাত্র চিনিলেন—ইহা আমেদ বেন্-হাসেনের ধাও! আমেদ বেন্ পূর্ব্ব-কথিত জাহাজ হইতে অস্ত্রশস্ত্রাদি সংগ্রহ করিয়া আফ্রিকার উপকূল অভিমুখে প্রত্যাবর্ত্তন করিতেছে। ধাওখানি তাঁহার নৌকার এত নিকট দিয়া যাইতেছিল যে, তিনি তাহার দুই চারিজন মাল্লাকেও চিনিতে পারিলেন। তিনি আরও দেখিলেন, তাঁহার শত্রু আমেদ বেন্ হাসেন ধাওর এক পাশে দাঁড়াইয়া তাঁহার দিকে চাহিয়া রহিয়াছে; তাহার হাতে একটি বন্দুক। সে তাঁহাকে লক্ষ্য করিয়া গুলি করিল, কিন্তু গুলি তাঁহার দেহে বিদ্ধ হইল না, তাঁহার মস্তকের অদূরে পড়িয়া নৌকার পাটাতনে বিদ্ধ হইল, পাটাতনের খানিকটা কাঠ চটিয়া গেল।—ডড্লে মনে মনে বলিলেন, “গুলিটা কেন আমার মস্তকে প্রবেশ করিল না? তাহা হইলে ত এই মুহূর্ত্তে আমার সকল যন্ত্রণার অবসান হইত।—আমার ভাগ্যদোষেই উহার লক্ষ্য ব্যর্থ হইল।”
ধাওখানি অদৃশ্য হইলে ডড্লে ক্ষীণস্বরে সামওয়েলিকে আহ্বান করিলেন, কিন্তু তাহার কোন সাড়া পাইলেন না। তখন তাঁহার ধারণা হইল, সামওয়েলি নিদারুণ যন্ত্রণায় প্রাণত্যাগ করিয়াছে, কিন্তু সে সত্যই মরিয়াছে কি না তাহা দেখিবার শক্তি হইল না। তিনি একইভাবে নৌকার উপর পড়িয়া রহিলেন। ক্রমে দিবাবসান হইল। শ্রান্ত রবি ধীরে ধীরে পশ্চিম গগন-প্রান্তে অস্তগমন করিলেন। সূর্য্যাস্তের পর সমুদ্রের মুক্ত বক্ষের উপর দিয়া শীতল সমীরণ প্রবাহিত হইতে লাগিল। সেই সুশীতল সমীরণ-প্রবাহে ডড্লের বেদনাপ্লুত দেহ যেন অনেকটা সুস্থ হইল, স্নেহময়ী জননী যেন বেদনাতুর শ্রান্ত শিশুকে ধীরে ধীরে বীজন করিয়া তাঁহার সকল সন্তাপ দূর করিতে লাগিলেন। তখন তাঁহার চেতনা বিলুপ্তপ্রায়, সেই অবস্থাতেও তাঁহার হৃদয়ে নূতন আশার সঞ্চার হইল, মনে হইল, এত কষ্টেও যখন প্রাণ বাহির হয় নাই, তখন ভগবান