হয় ত তাঁহার প্রাণরক্ষা করিবেন। এই দারুণ সঙ্কট হইতে তিনি উদ্ধার লাভ করিবেন।—আশা মায়াবিনী।
ক্রমে সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হইল। জীব-কোলাহলশূন্য দিগন্তব্যাপী মহাসমুদ্রে সন্ধ্যা কি গম্ভীর। কি নিস্তব্ধ।—দেখিতে দেখিতে গগনের নীল সরোবরে শত-শত শুভ্রজ্যোতি নক্ষত্র শ্বেতকমলের ন্যায় বিকশিত হইল। তাহারা যেন স্থির-দৃষ্টিতে সহানুভূতিভরে তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল।—আরও কিছুাল পরে শশধর পূর্ব্বাকাশে সমুদিত হইয়া সমগ্র প্রকৃতি রজত-ধবল কিরণ-প্রবাহে প্লাবিত করিলেন। শুভ-স্নিগ্ধ কিরণ সম্পাতে বিশ্ব-প্রকৃতি হাসিতে লাগিল। সঙ্গে-সঙ্গে নৈশ-সমীরণ-প্রবাহ প্রবল হইল। বায়ুবেগে ক্ষুদ্র নৌকাখানি উত্তাল সমুদ্র-তরঙ্গে আন্দোলিত হইতে লাগিল, নৌকার উপর দুই একবার জলও উঠিল। ডড্লের মনে হইল, এইবার বুঝি ভরা ডুবিবে।— কিন্তু নৌকা ডুবিল না, হেলিয়া-দুলিয়া জলের উপর দিয়া ভাসিয়া চলিল। ডড্লে বিস্ফারিত নেত্রে স্নিগ্ধজ্যোতি জ্যোতিষ্কমণ্ডলীর দিকে চাহিয়া রহিলেন। তাঁহার মনে হইতে লাগিল,শত শত ভীষণ-দর্শন প্রেত সহসা সমুদ্রগর্ভ হইতে সমুত্থিত হইয়া তাঁহার ক্ষুদ্র তরণীখানি পরিবেষ্টনপূর্ব্বক উদ্দাম নৃত্য আরম্ভ করিয়াছে। বায়ু প্রবাহে তিনি তাঁহার উষ্ণ দেহে তাহাদের শীতল স্পর্শ অনুভব করিয়া শিহরিয়া উঠিলেন। ভয়ে কি?—এখনও ভয়।—মৃত্যুর অতলস্পর্শ অনন্তশয্যায় আশাহীন, শান্তিহীন, অবলম্বনহীন, অবসাঙ্গ প্রসারিত করিয়াও ভয়?—মৃদু হাস্য তাঁহার শুষ্ক অধরপ্রান্তে আত্মপ্রকাশ করিয়া তৎক্ষণাৎ অন্তর্হিত হইল, তিনি ধীরে-ধীরে চক্ষু মুদিত করিলেন। এবার তাঁহার মনে হইল- কে একজন আলোক-সামান্য রূপবতী নারী রূপের প্রভায় চতুর্দ্দিক উদ্ভাসিত করিয়া এক খানি সুদৃশ্য হিরন্ময় তরণীতে আরোহণ পূর্ব্বক ধীরে ধীরে চন্দ্রমণ্ডল হইতে তাঁহার দিকে নামিয়া আসিতেছেন। তাঁহার অঙ্গে প্রস্ফুটিত শুভ্র-কুসুমের পরিচ্ছদ, তাঁহার স্বর্ণাভ কেশদাম মন্দার-মাল্যে সমাচ্ছন্ন, তাঁহার মুখে প্রসন্ন হাস্য, তাঁহার নয়নের স্নিগ্ধ দৃষ্টি হইতে যেন করুণা ও সমবেদনা ক্ষরিত হইতেছে সেই রমণীমূর্ত্তি ধীরে ধীরে তাঁহার শিয়র-প্রান্তে আসিয়া দাঁড়াইলে তিনি চিনিতে