ডড্লে মাথা তুলিবার চেষ্টা করিলেন, কিন্তু পারিলেন না। তখন সেই পাচকটি তাঁহার মাথার কাছে বসিয়া সবটুকু ব্রথ্ ধীরে-ধীরে তাঁহাকে পান করাইল। ব্রথ্টুকু সুস্বাদ না হইলেও তাহা পান করিয়া তাঁহার দেহে কিঞ্চিৎ বলাধান হইল। তাঁহার বাক্স্ফূর্ত্তি হইল। তিনি ক্ষীণস্বরে সেই পাচককে জাহাজের নাম জিজ্ঞাসা করিলেন, কিন্তু শরীর এতই দুর্ব্বল যে, আর কোন কথা জিজ্ঞাসা করিতে পারিলেন না। তাঁহার অবস্থা বুঝিয়া পাচকটিও তাঁহাকে আর কোন কথা বলিতে দিল না। তাঁহাকে ঘুমাইতে বলিয়া সে প্রস্থান করিল।—ডড্লে অঘোর নিদ্রায় অভিভূত হইলেন। তাঁহার যন্ত্রণার অনেক উপশম হইয়াছিল।
যখন তাঁহার নিদ্রাভঙ্গ হইল, তথন মধ্যাহ্নকাল। তিনি চক্ষু মেলিয়া দেখিলেন, জাহাজেব খালাসীরা তাঁহার অদূরে বসিয়া মধ্যাহ্ন ভোজনে রত আছে। দীর্ঘকাল সুনিদ্রায় তাহার শ্রান্তি ক্লান্তি বিদূরিত হইয়াছিল, দেহে যেন নবজীবনের সঞ্চার হইয়াছিল।—তিনি জাগিয়াছেন শুনিয়া পূর্বোক্ত পাচকটি কিছু লঘু খাদ্যদ্রব্য লইয়া তাঁহার নিকট উপস্থিত হইল, এবং সযত্নে তাঁহাকে ভোজন করাইল, তাঁহার আহার শেষ হইলে সে বলিল, “তুমি বাপু এ যাত্রা বড় বাঁচিয়া গিয়াছ। আমরা যখন তোমাকে ধরাধরি করিয়া নৌকা হইতে জাহাজে তুলিলাম-তখন মনে হইয়াছিল ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তুমি অক্কা পাইবে।—তোমার শরীরে কিছু ছিল না, তাহার উপর যে শক্ত বাঁধন। যাহা হইক, এখন আর তোমার অধিক কথা কহিয়া কায নাই। তুমি আর একটু সবল হইলে তোমার বিপদের সকল কথা খুলিয়া বলিও,—তাহা শুনিবার জন্য আমাদের সকলেরই বড় আগ্রহ হইয়াছে। কে তোমাকে বাঁধিয়াছিল, কেন বাঁধিয়াছিল, ছোট নৌকাখানিতেই—বা কিরূপে উঠিয়াছিলে—এ সকল কথা আমরা শুনিতে চাই। অনেক-কাল জাহাজে কায করিতেছি, এরকম কাণ্ড কখনও দেখি নাই।—দেখিতেছি তুমি মুসলমান, আরর বা ঐ রকম কোন দেশের লোক, ইংরাজী বলিতে পার ত?”