আর কি? এই আরবগুলোর মত নিমকহারাম দুনিয়ায় নাই। উহাদের উপকার কর, সুবিধা পাইলেই তোমাকে ছোবল্ মারিবে, কৃতজ্ঞতার সহিত উহাদের পরিচয় নাই। লাঠি না খাইলে উহারা সায়েস্তা থাকে না।”
ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন আরব-বেশধারী ডড্লেকে লক্ষ্য করিয়া আরও কিঞ্চিৎ নীতিকথার প্রচার করিত, কিন্তু আর একজন ভদ্রলোক সেই দিকে অগ্রস হইয়া তাহার সহিত আলাপ আরম্ভ করিতেই তাহার উচ্ছাস বন্ধ হইল। আগন্তুক তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, “তোমার রোগী কেমন, ডাক্তার? বোধ হয় বেচারা বাঁচিয়া উঠিবে?
মিঃ ডড্লে আগন্তুকের কথা শুনিয়া চম্কাইয়া উঠিলেন। এ কণ্ঠস্বর ত তাঁহার অপরিচিত নহে, কিন্তু কোথায় শুনিয়াছেন?—হঠাৎ তাহার মনে পডিল, তিনি মোজাম্বিক হইতে যাত্রা করিবার পূর্ব্বে কেপ টাউনের সমুদ্রতীরবর্তী একটি জুয়ার আড্ডায় ডাক্তার ল্যাম্পিয়নের সহিত এই লোকটিকে কথা কহিতে শুনিয়াছিলেন।—ইহারা কি উদ্দেশ্যে কোথায় যাইতেছে?
সেইদিন অপরাহ্নে ডড্লে মিস্ এরস্কাইনকে জাহাজের ডেকের উপর রেলিংএর নিকট দণ্ডায়মান দেখিলেন। মিস্ এরস্কাইনকে দেখিয়া বোধ হইল তিনি অত্যন্ত অসুস্থ, সে লাবণ্য আর নাই, শরীর যেন আধখানা হইয়া গিয়াছে, চোখের কোণে কালি পডিয়াছে, মুখখানি সাদা কাগজের মত ফ্যাকাসে।— এত অল্প দিনে তাহার এই অদ্ভুত পরিবর্তেনে ডড্লে অত্যন্ত বিস্মিত হইলেন। কে জানিত এরূপ স্থানে এরূপ অবস্থায় পুনর্ব্বার তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ হইবে?—এখন যে তাঁহার আত্ম-পরিচয় দানেরও উপায় নাই।—তাহার আশঙ্কা হইল, মিস্ এরস্কাইন কোন দুর্ভেদ্য ষড়যন্ত্র-জালে বিজডিত হইয়াছেন, তাঁহার মনের সুখশান্তি নষ্ট হইয়াছে, এই জন্যই তিনি মনোকষ্টে এরূপ জীর্ণশীর্ণ হইয়াছেন। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র কি, ইহাদের সমুদ্রযাত্রার উদ্দেশ্য কি, তাহা তিনি অনুমান করিতে পারিলেন না। মিস্ এরস্কাইন কোনরূপে বিপন্ন হইয়া থাকিলে তাঁহার উদ্ধারসাধনের জন্য তিনি প্রাণপণ করিতে কৃতসঙ্কল্প হইলেন, কিন্তু নিজের শোচনীয় অবস্থার কথা স্মরণ করিয়া