পাতা:নাবিক-বধূ.djvu/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮
নাবিক-বধু

অবস্থায় পডিয়াছিলে, কে তোমায় সে-রকম দুর্দ্দশা করিয়াছিল,—তাহা জানিবার জন্য আমার বড় আগ্রহ হইয়াছে। কেবল আমি নহি, জাহাজের সকল লোকই এ সকল কথা জানিতে চাহে।”

 ডড্‌লে কতক ইংরাজী, কতক আরবীতে যাহা বলিলেন, তাহার মর্ম্ম এই যে-জাঞ্জিবার হইতে পম্বা উপসাগরে একখানি ‘ধাও’ যাইতেছিল, তাঁহার চাচা সেই ধাওর মালিক। এই চাচাটি বড়ই লোভী ও হিংস্র প্রকৃতির, তিনি বিস্তর পৈতৃক অর্থের উত্তরাধিকারী হওয়াতে সে তাঁহার বড়ই হিংসা করিত, এবং যখন-তখন তাঁহার নিকট টাকা চাহিত। তিনি সেই ‘ধাও’য়ে তাঁহার চাচার সহিত বাণিজ্যে যাইতেছিলেন। পথিমধ্যে কথায়-কথায় চাচার সহিত বচসা হয়, ইহাতে সেই দুর্বৃত্ত ক্রুদ্ধ হইয়া তাঁহার মস্তকে দণ্ডাঘাত করে। আঘাতে তিনি অজ্ঞান হইয়া পড়িলে চাচা তাঁহাকে হাত-পা বাঁধিয়া একথানি নৌকায় তুলিয়া সমুদ্রে ভাসাইয়া দেয়। তাঁহার সঙ্গে তাঁহার একটি বিশ্বাসী ক্রীতদাস ছিল, পাছে সে এই অত্যাচারের কথা প্রকাশ করে, এই ভয়ে চাচা তাহাকেও প্রহারে অচৈতন্য করিয়া দড়ি দিয়া হাত-পা বাঁধিয়া সেই খোল নৌকায় ফেলিয়া রাখে। নৌকাখানি তাহাদিগকে লইয়া অকুল সমুদ্রে ভাসিয়া চলে।—তাহার পর যাহা যাহা ঘটিয়াছিল তাহা বলা বাহুল্য মাত্র।

 পাচক বলিল, “দুনিয়ার সকল চাচাই প্রায় ঐ রকম। আমারও এক চাচা ছিল, আমি জাহাজে চাকরী লইবার পূর্ব্বে সেই চাচা বেটার সঙ্গে একান্নে ছিলাম। সে আমার উপর বড় অত্যাচার করিত, হাতে কোন কায না থাকিলে আমাকে ধরিয়া ঠেঙ্গাইত। তাহার অত্যাচার সহ্য করিতে না পারিয়া আমি বাড়ী ছাড়িয়া পলাই, এবং জাহাজে চাকরী লই। এখন বেশ আছি, কোন চাচা-কাচার ধার ধারি না।—তুমি যদি দেশে ফিরিয়া যাও, তাহা হইলে তোমার চাচা বেটার দেখা পাইলে তাহার দাড়িতে আগুন লাগাইয়া দিও; মুখ পোড়াইয়া না দিলে সে সায়েস্তা হইবে না।—মুগুর না খাইলে কি কুকুর জব্দ হয়?