কার্য্যের দিন স্থির করিয়াছ, আমার তাহাতে আপত্তি নাই, কতক গুলা বাজে কথা বলিয়া সময় নষ্ট করিবার আবশ্যক কি?”
উভয়ের একজন চেয়ার ছাড়িয়া উঠিল—বুঝিতে পারিয়া ডড্লে লঘুপদবিক্ষেপে দূরে সরিয়া গিয়া একটা পিতলের হাতল পরিষ্কার করিতে লাগিলেন। মুহূর্ত্ত পরে উভয়ে কেবিন হইতে বাহিরে আসিয়া ডড লেকে দেখিতে পাইল, কাপ্তেন ডাক্তার লাম্পিয়নের মুখের দিকে চাহিয়া কুঞ্চিত করিল। ল্যাম্পিয়ন তাহার মনের ভাব বুঝিতে পারিয়া বলিল, “ইংরাজী জানে না।”—তাহারা উভয়ে অন্যদিকে প্রস্থান করিল।
মিঃ ডড্লে কিংকর্তব্যবিমূঢ়ভাবে কিয়ৎকাল সেই স্থানে বসিয়া রহিলেন, তাঁহার সন্দেহ যে অমূলক নহে, এ ধারণা তাঁহার মনে বদ্ধমূল হইল। তিনি বুঝিলেন এই দুই নরপিশাচ মিস্ এরসকাইনকে হত্যা করিবার জন্য ষড়যন্ত্র করিয়াছে। ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন কোন প্রকার মৃদু বিষ প্রয়োগে তিল তিল করিয়া তাঁহার প্রাণ নষ্ট করিবে, এবং আর তিন দিনের মধ্যেই তাহার সঙ্কল্প সিদ্ধ হইবে। তিনি ইহাও বুঝিতে পারিলেন যে, ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন নানাপ্রকার বদ খেয়ালে তাহার যথাসর্ব্বস্ব নষ্ট করিয়া তাহার মহাসমৃদ্ধ ভগিনীপতির বিপুল সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারিণী মিস্ এরস ইনকে এইভাবে হত্যাপূর্ব্বক অবৈধ উপায়ে তাঁহার সমস্ত সম্পত্তি আত্মসাৎ করিবার সঙ্কল্প করিয়াছে, এবং জাহাজের কাপ্তেনটা এবিষয়ে তাহার সাহায্য করিতেছে। তাহাদের অর্থলালসা চরিতার্থ করিবার জন্য এই সংসারজ্ঞান-বিরহিত, আত্মরক্ষায় অসমর্থ, সরলা যুবতীকে জীবন বিসর্জ্জন করিতে হইবে।—এই নৃশংস হতাকাণ্ডের কথা লইয়া যাহাতে কোন আন্দোলন-আলোচনা না হয়, বা কেহ তাহাদিগকে সন্দেহ করিতে না পারে,—এই উদ্দেশ্যে সমুদ্রবক্ষে জাহাজের এই পৈশাচিক অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন করিবার ব্যবস্থা হইয়াছে।
মিঃ ডড্লে মনে মনে বলিলেন, “আমার দেহে জীবন থাকিতে আমি এই দুর্বত্তদের সঙ্কল্প সিদ্ধ হইতে দিব না! আমি উহাদের অভিসন্ধি কতক-কতক বুঝিতে পারিয়াছি, দেখি,আমি মিস্ এরস্কাইনকে রক্ষা করিতে পারি কি না,