মিঃ ডড্লে অতঃপর স্বকার্যে মনঃসংযোগ করিলেন। তিনি মিস্ এরস্কাইনকে ডেকের উপর দেখিবার আশায় বেলা দশটা পর্য্যন্ত সেই স্থান হইতে নড়িলেন না, অত্যন্ত অভিনিবেশসহকারে কল-কব্জাই পরিষ্কার করিতে লাগিলেন। কিন্তু সেদিন প্রভাতে মিস্ এরস কাইন ডেকের উপর আসিলেন না। ডড লের সন্দেহ হইল, মিস্ এরস্কাইন পূর্ব্বাপেক্ষা অধিক অসুস্থ হওয়াতেই তাঁহার কেবিন ছাডিয়া ডেকে আসিতে পারেন নাই।—ডড লে কোন কৌশলে তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য অধীর হইয়া উঠিলেন।—এখন সতর্ক হইতে না পারিলে বা মিস্ এরস ইনকে সতর্ক করিতে না পারিলে তাঁহার জীবনরক্ষার কোনও আশা থাকিবে না, সুতরাং আর একমুহূর্ত্তও নষ্ট করা উচিত নহে।
ডড্লে একদিকে কায শেষ করিয়া জাহাজের অন্যদিকে কলকব্জা পরিষ্কার করিতে চলিলেন।—এবার তিনি যে স্থানে বসিয়া কায করিতে লাগিলেন, সেই স্থান হইতে জাহাজের সমস্ত ভাগটা বেশ দেখিতে পাওয়া যায়। তাঁহার অজ্ঞাতসারে যে মিস্ এরস্কাইন ডেকের উপর যাইবেন, তাহার সম্ভাবনা হিল না। অপরাহ্নে তিনি দেখিতে পাইলেন, জাহাজের ষ্টুয়ার্ড একখানি ‘রগ্’ ও দুইটি পাতলা বালিশ লইয়া ডেকের দিকে চলিল। ইহা সে কাহার জন্য লইয়া যাইতেছে, তা তিনি তৎক্ষণাৎ বুঝিতে পারিলেন। কয়েক মিনিট পরে মিস্ এরস্কাইন তাঁহার মাতুলের স্কন্ধে ভর দিয়া অতি কষ্টে ডেকের দিকে চলিলেন। সেদিন তাঁহাকে অধিকতর অসুস্থ দেখাইতেছিল, তাঁহার মুখে কে যেন কালি মাড়িয়া দিয়াছে। তাঁহার জীর্ণ দেহের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া ডড্লের সর্বাঙ্গ ক্রোধে জ্বলিয়া উঠিল, তাঁহার ক্ষোভের সীমা রহিল না অতি কষ্টে তিনি আত্মসংবরণে সমর্থ হইলেন। তিনি কায করিতে-করিতে দেখিতে পাইলেন, দুর্বত্ত ল্যাম্পিয়ন তাঁহাকে একথানি ডেক-চেয়ারে বসাইয়া, তাঁহাকে দুই একটি মৌখিক সান্ত্বনার কথা বলিয়া ধীরে ধীরে সেখান হইতে চলিয়া গেল। তাহার চক্ষুদু’টি যেন হাসিতেছিল, কার্য্যোদ্ধারের আর অধিক বিলম্ব নাই বুঝিয়া সে উৎসাহ ও প্রফুল্লতা গোপন করিতে পারিতেছিল না।