বিধাতা যে তাহার অলক্ষ্যে তাহার দুষ্কর্মের প্রতিফল দানের জন্য জাল বিস্তার করিতেছেন,—তাহা তাহার অনুমান কবিবার শক্তি ছিল না।
ডাক্তার ল্যাম্পিয়ন প্রস্থান করিলে মিস্ এরস্কাইন একখানি নভেল খুলিয়া তাহাতে দৃষ্টি সংযোগ করিলেন, কিন্তু তিনি তাঁহার দুই চারিছত্রও পাঠ করিতে পারিলেন না, হঠাৎ পুস্তকখানি তাঁহার অবসন্ন হস্ত হইতে খসিয়া ডেকের উপর পতিত হইল। তিনি পুস্তকখানি তুলিয়া লইবার চেষ্টা করিয়া উদাসীনভাবে সেইদিকে চাহিয়া রহিলেন। তাঁহার চক্ষু হইতে এক বিন্দু অশ্রু গড়াইয়া পড়িল, বোধ হয় তিনি জীবনে হতাশ হইয়াছিলেন। এত চেষ্টাতেও তাঁহার শরীর সুস্থ হইতেছে না। মুক্ত সমুদ্রের নির্ম্মল বায়ু তাঁহার কোন উপকার করিতে পারিতেছে না।—হায়, তিনি স্বপ্নেও ভাবেন নাই, ঔষধ বলিয়া তিনি যাহা প্রত্যহ যথানিয়মে সেবন করিতেছেন—তাহা ঔষধ নহে, বিষ। যাহারা তাঁহার রক্ষক, তাঁহারাই যে ভক্ষক। তাঁহার নয়নে অশ্রুবিন্দু দেখিয়া ডড লে কোনরূপে আত্মসংবরণ করিতে পারিলেন না। তিনি ভাবিলেন, এই সুযোগে মিস্ এরস্কাইনকে তাঁহার মনের কথা বলিতে না পারিলে এমন সুযোগ হয় ত আর আসিবে না। তিনি একবার তীক্ষ দৃষ্টিতে চতুর্দ্দিকে চাহিলেন, কিন্তু নিকটে কাহাকেও দেখিতে পাইলেন না। তখন তিনি ডেকের রেলিং পরিষ্কার করিবার ভান করিয়া ধীরে ধীরে মিস এরস্কাইনের নিকট উপস্থিত হইলেন। তিনি কি করিয়া আত্মপরিচয় জ্ঞাপন করিবেন তাহাই ভাবিতে লাগিলেন, কারণ ডড লের আশঙ্কা হইতেছিল—তাঁহার কথা শুনিয়া কিছু বুঝিবার পূর্ব্বেই যদি মিস্ এরস্কাইন হঠাৎ ভয় পাইয়া আর্ত্তনাদ করিয়া উঠেন, তাহা হইলেই সর্ব্বনাশ! কিন্তু অন্য উপায় ত নাই। ডড্লে ক্ষণকাল ইতস্ততঃ করিয়া নিম্নস্বরে বলিলেন, “মিস্ এরস কাইন, আপনি কি আমাকে চিনিতে পারিতেছেন?
মিস্ এরস্কাইন তখন আত্মচিন্তায় বিভোর ছিলেন, ডড্লের মৃদু কণ্ঠস্বর তাঁহার কর্ণগোচর হইল না, সুতরাং ডড্লে পুনর্ব্বার সেই কথা বলিলেন। এবার তাঁহার কথা শুনিয়া মিস্ এরস্কাইন বিস্ময়াবিল নেত্রে তাঁহার মুখের